পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে বারংবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারেন না। আর পশ্চিমবঙ্গের এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করার জন্য রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফে নানা ধরনের স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে যা এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আলো ফাউন্ডেশনের তরফে কার্যকরী অলো স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কার্যকরী একটি বেসরকারি স্কলারশিপ যার মাধ্যমে আর্থিক ভাবে দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সাহায্য করা হয়ে থাকে।
আলো স্কলারশিপের আওতায় কারা আবেদন জানাতে পারবেন:-
১. আলো ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. চলতি বছরে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে তারাই কেবলমাত্র আলো স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৩. যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে আর্টস বিভাগে পড়াশোনা করছেন তাদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে। অন্যদিকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা কমার্স এবং সাইন্স বিভাগে পড়াশোনা করছেন তাদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে তবে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে।
৪. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে বিপিএল বা EWS শ্রেণীভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
স্কলারশিপের আওতায় কত টাকার অনুদান পাওয়া যায়?
আলো স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে এই স্কলারশিপের আওতায় ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেক মাসে ৬০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রতি বছরে ৭২০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
আলো স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাবেন কিভাবে?
১. রাজ্যের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে আলো স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন। আলো স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানানোর জন্য আপনাকে আলো ফাউন্ডেশন -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট aalo.org.in -এ যেতে হবে।
২. এরপর আপনাকে আলো ফাউন্ডেশন -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের হোম পেইজের মেনু বারে থাকা অপশনগুলির মধ্যে থেকে Scholarship অপশনটি নির্বাচন করতে হবে।
৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে একটি পেজ আসবে যাতে আপনি আলো স্কলারশিপ সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য পেয়ে যাবেন। এই পেজটির নিচের দিকে থাকা Click Here অপশনে ক্লিক করলেই আপনি আলো স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি পেয়ে যাবেন।
৪. এরপর এই ফর্মটিতে আপনাকে আপনার নাম, আপনার পিতার নাম, আপনার ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাস্ট, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। তথ্য প্রদানের পর ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত নথি সঠিকভাবে আপলোড করতে হবে।
৫. সমস্ত তথ্য পূরণ করার পর এবং ফর্মে উল্লিখিত সমস্ত নথি আপলোড করার পর ফর্মটি সাবমিট করলেই আলো স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফর্মটি সাবমিট করা হলেই আপনার কাছে একটি কনফার্মেশন মেইল আসবে। সুতরাং ফর্ম সাবমিট করার পর মেইল বক্সটি অবশ্যই একবার চেক করে দেখবেন।
আরও পড়ুন:- সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় আবেদন করুন এবং ২ লক্ষ টাকার অর্থসাহায্য পেয়ে যান।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিগুলি কি কি?
আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীরা আধার কার্ড
আবেদনকারী শিক্ষার্থীর মাধ্যমিকের মার্কশিট
স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র
পরিবারের বার্ষিক আয়ের সার্টিফিকেট
BPL বা EWS সার্টিফিকেট
আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
মোবাইল নম্বর
ইমেল অ্যাড্রেস
আবেদনকারীর ব্যাংকের পাস বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা
নির্বাচনের প্রক্রিয়া:-
আলো স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, পরিবারের বাৎসরিক আয় এবং আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর নম্বরের ভিত্তিতে এই স্কলারশিপের আওতায় কারা আগামী দিনে অনুদান পেতে চলেছেন তা নির্বাচন করা হয়ে থাকে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হলে এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়ে থাকে। এই ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হলে তবেই ছাত্র-ছাত্রীরা আলো স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাবেন, এমনটাই জানানো হয়েছে এই স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে।
আবেদনের সময়সীমা:-
চলতি বছরে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা কবে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন তা সম্পর্কিত কোন তথ্য এখনো পর্যন্ত স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা হয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই এই স্কলারশিপের অধীনে অনুদান পাওয়ার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে। আলো স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই আপনি এই স্কলারশিপের আবেদনের সময়সীমা সম্পর্কে জানাতে পারবেন।
আলো ফাউন্ডেশনের তরফে কার্যকরী এই আলো স্কলারশিপটি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দুঃস্থ অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এক বিশেষ অবলম্বন হয়ে উঠেছে। আলো ফাউন্ডেশনের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ১০৩ জন প্রথম জেনারেশন ছাত্র এবং ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে আলো ফাউন্ডেশন। এই ১০৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী, যারা নিজেদের মেধার জোরে এবং আলো স্কলারশিপের সহায়তায় মাধ্যমিকের গণ্ডি ছাড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। আর তাতেই সমগ্র রাজ্যের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের কাছে বারংবার প্রশংসিত হয়েছে আলো স্কলারশিপ এবং আলো ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ।