নবান্ন স্কলারশিপের আবেদনের প্রক্রিয়ায় আনা হলো বিশেষ পরিবর্তন, নতুন আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।

পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রাণ তহবিল থেকে কার্যকরী এক বিশেষ স্কলারশিপ হল নবান্ন স্কলারশিপ। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, চলতি বছরে নবান্ন স্কলারশিপের আবেদন পদ্ধতিতে এক বিরাট পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর তাতেই আজকের এই পোস্টে আমরা নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় কিভাবে আপনারা নতুন পদ্ধতিতে আবেদন জানাতে পারবেন তা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

নবান্ন স্কলারশিপ:-

রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার সহ নানাবিধ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফে কার্যকরী স্কলারশিপগুলির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের কতগুলি আবশ্যক যোগ্যতা পূরণ করতে হয়, এর পাশাপাশি পূরণ করতে হয় নম্বরের মাপকাঠিও। ফলত বহু ছাত্র-ছাত্রী এই সমস্ত স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারেন না। কিন্তু সমগ্র রাজ্যজুড়ে এমন প্রচুর মধ্যমানের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা পড়াশোনা করতে চাইলেও তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং নম্বর শতাংশ উভয়ই তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই সমস্যা থেকে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নবান্ন স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছিল।

ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, নবান্ন স্কলারশিপ দক্ষিণবঙ্গে নবান্ন স্কলারশিপ নামে এবং উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা স্কলারশিপ নামে বিশেষভাবে পরিচিত। মূলত মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা নয়, উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন এবং স্নাতক স্তরে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছে তারাও এই স্কলারশিপের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। যদিও ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সরকারের তরফে নির্ধারিত নম্বরের মাপকাঠি এবং আবশ্যিক যোগ্যতা পূরণ করতে পারলে তবে এই স্কলারশিপের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:- ই-শ্রম কার্ড থাকলে কি কি সুবিধা মিলবে, জেনে নিন এখনই।

নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যে নতুন প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করতে হবে তা হলো:-

রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ইতিপূর্বে নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে নবান্নে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে অথবা উত্তরকন্যা অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে কিংবা ই-মেইল -এর মাধ্যমে আবেদন জানাতে হতো। কিন্তু বর্তমানে Chief minister’s relief fund ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসেই স্কলারশিপের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে তা হল:

১. নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই Chief minister’s relief fund ওয়েবসাইটে https://cmrf.wb.gov.in/ পৌঁছে যেতে হবে। উক্ত ওয়েবসাইটের হোম পেইজে থাকা Apply for Financial Assistance for Education অপশনে ক্লিক করুন।

২. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে থাকা Sign Up অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর এবং OTP -এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর Login -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।

nabanna-scholarship

৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তার একেবারে নিচের দিকে থাকা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের চেক বক্সে ক্লিক করে Apply Now অপশনে ক্লিক করুন।

৪. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। উক্ত ফর্মে আপনাকে আপনার নাম, আপনার অভিভাবকের নাম, অভিভাবকের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, আপনার বয়স, জেন্ডার, বর্তমান ঠিকানা, কাস্ট, বার্ষিক ইনকাম সংক্রান্ত তথ্য এবং কোন সালে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন তা সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৫. এই সমস্ত তথ্যগুলি পূরণ করে ফর্মটি সাবমিট করা হলে আপনাকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হবে। এই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি ভবিষ্যতে আপনার প্রয়োজন হবে সুতরাং এটিকে কপি করে রাখুন।

৬. পরবর্তীতে আপনি কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকেন কিনা তা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এরপর আপনি যে কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।

৭. এরপর আপনাকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আইএফএসসি কোড, ব্যাংকের নাম, ব্রাঞ্চের নাম সহ ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। সবশেষে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিগুলি সঠিকভাবে আপলোড করলেই নবান্ন স্কলারশিপের অধীনে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই নবান্ন স্কলারশিপের অধীনে আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে, সুতরাং আপনিও যদি এই স্কলারশিপের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে চান তবে যত দ্রুত সম্ভব নির্ধারিত পোর্টালে গিয়ে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। যদিও কতদিন পর্যন্ত আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর রাখা হবে তা সংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

Leave a Comment