আবেদন করুন প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের বিনিময়ে অনুদান পান।

ভারতবর্ষের সাধারণ জনগণের মূল পেশাই হলো কৃষিকাজ। এমনকি ভারতের অর্থনীতিও অনেকটা কৃষি নির্ভর। যার কারণে কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। তবে এবারে কৃষকদের সুবিধার খাতিরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন এক প্রকল্প লঞ্চ করা হয়েছে যার মাধ্যমে ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, সমগ্র ভারত জুড়ে ঝড়, বৃষ্টি সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রত্যেক বছর প্রচুর পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়ে থাকে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এমনকি বহু ক্ষেত্রেই ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন আর তাই কৃষকদের এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই নতুন প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে কার্যকরী এই নতুন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা নামে সমগ্র ভারতের কৃষকদের কাছে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আপনারা কি কি সুবিধা পাবেন:-

১. যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভারতে বসবাসকারী যেকোনো কৃষকের ফসল নষ্ট হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. শুধুমাত্র চাষের সময় নয়, ফসল তোলার পরেও ফসলের ক্ষতি হলে এই প্রকল্পের আওতায় সমগ্র দেশের কৃষকরা অনুদান পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সাইক্লোন কিংবা অসময়ের বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হলে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতাভুক্ত সমস্ত কৃষকই ক্ষতিপূরণ পাবেন, এমনটাই জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্যে।
৩. প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় খারিফ শস্যের বীমার জন্য কৃষককে মাত্র ২ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হয় এবং রবি শস্যের বীমার জন্য কৃষককে মাত্র ১.৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হয়। অন্যদিকে উদ্যান শস্যের বীমার জন্য শুধুমাত্র ৫ % প্রিমিয়াম দিতে হয়। আর এই প্রকল্পের বাকি প্রিমিয়াম বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে কৃষকরা বীমাকৃত অর্থের সম্পূর্ণটাই ফেরত পাবেন।
৪. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কোন কৃষক যদি বীজ বপন করতে না পারেন তাহলেও এই যোজনার আওতায় বীমার টাকা পাওয়া যাবে।
৫. প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যার ফলে যেকোনো কারণে ফসল নষ্ট হলে সেই ফসলের ক্ষতিপূরণ পেতে যাতে কোনরকম দেরি না হয় তা অত্যন্ত সহজেই নিশ্চিত করা সম্ভব।
৬. প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার টাকা কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:- আবেদন করুন স্টেশন টিকিট বুকিং এজেন্ট আইডির জন্য। টিকিট বুক করে প্রতি মাসে ইনকাম করুন ভালো পরিমাণ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় কারা আবেদন জানাতে পারবেন?

১. প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী কৃষককে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
২. মূলত যে সমস্ত কৃষকদের ফসল যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে অথবা যে সমস্ত কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বীজ বপন করতে পারেননি তারাই এই যোজনার আওতায় ফসল বীমার সুবিধা পাবেন। তবে এই বীমার সুবিধা পাওয়ার জন্য ফসল চাষের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে হবে।
৩. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যে সমস্ত কৃষকদের নাম বাংলা শস্য বীমা যোজনায় নথিভুক্ত রয়েছে তারা কোনভাবেই এই যোজনার সুবিধা পাবেন না।

প্রধানমন্ত্রী ফসল যোজনার অধীনে আবেদনের প্রক্রিয়া:-

১. এই ফসল বীমার আওতায় আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://pmfby.gov.in/ -এ যেতে হবে।

২. এরপর ওয়েবসাইটের হোম পেইজে থাকা Farmer Corner অপশনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে থাকা Guest Farmer অপশন ক্লিক করুন।

৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে ফর্মটি আসবে তাতে আপনাকে আপনার নাম পিতা অথবা স্বামীর নাম, মোবাইল নম্বর বয়স ক্যাটাগরি, ফার্মার টাইপ সহ অন্যান্য তথ্যগুলি নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। এক্ষেত্রে Farmer Type -এর আওতায় আপনি Small, Marginal এবং others নামক তিনটি অপশন পেয়ে যাবেন। আপনার যদি ১ হেক্টরের কম জমি থাকে তাহলে small অপশনটি নির্বাচন করুন, যদি ১ হেক্টরের বেশি কিন্তু ২ হেক্টরের কম জমি থাকে তবে Marginal অপশনটি নির্বাচন করুন। যে সমস্ত কৃষকদের ২ হেক্টরের বেশি জমি রয়েছে তারা Others অপশনটি নির্বাচন করবেন।

apply-for-pradhan-mantri-fasal-bima-yojana

৪. এরপর আপনাকে আপনার রাজ্য, জেলা, সাব-ডিস্ট্রিক্ট, গ্রাম, পিন কোড সহ ঠিকানা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। পরবর্তীতে Farmer ID অপশনের আওতাধীন ID Type -এর অধীনে UID নির্বাচন করুন এবং পরবর্তীতে ID No -এর আওতায় আপনার আধার নম্বরটি সঠিকভাবে লিখুন।

৫. সবশেষে আপনাকে আপনার ব্যাংকের নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকটি কোন জেলায় অবস্থিত, ব্যাংকের IFSC Code সহ ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে লিখে ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে Create User অপশনে ক্লিক করুন।

৬. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে একটি নতুন পেজ চলে আসবে। এই পেজের নিচের দিকে থাকা Next অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে Personal/ Residential Address -এর আওতায় আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে পারবেন।

৭. এরপর Bank Details অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে আসা নতুন পেজটিতে আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত প্রকার তথ্য দেখতে পাবেন। এবারে এই সমস্ত তথ্যের বাঁদিকে থাকা চেক বক্সে ক্লিক করে Next অপশনে ক্লিক করুন।

৮. তারপর Crop Details অপশনে ক্লিক করুন। এই অপশনের আওতায় আপনাকে আপনার রাজ্য আপনি কোন স্কিমে (Pradhan Mantri Fasal Bima Yojana) আবেদনে ইচ্ছুক তা সঠিকভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে। পরবর্তীতে Season (খারিফ/রবি), কোন অর্থেবর্ষের জন্য আবেদন জানাতে চাইছেন তা নির্বাচন করে নিন।

৯. এরপর Land Details -এর আওতায় থাকা আপনার জমি সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি একাধিক ফসলের বিমার জন্য আবেদন জানাতে চান Mix Cropping অপশনে ক্লিক করুন। আবার Showing Date অপশনের আওতায় আপনি কত তারিখে ফসল চাষ করছেন তা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।

১০. সবশেষে আপনার জমির খাতা নম্বর, প্লট নম্বর, কতটা জমির আপনি ইন্সুরেন্স করতে চাইছেন তা সঠিকভাবে লিখে নিন। এক্ষেত্রে আপনি যদি একাধিক জমির ইন্সুরেন্স করাতে চান তবে Add Crop or Survey Number for insurance অপশনে ক্লিক করে আপনার সমস্ত জমিগুলির ডিটেইলস এক এক করে যুক্ত করুন।

১১. সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হলে উক্ত পোর্টালে উল্লিখিত সমস্ত প্রকার নথি সঠিকভাবে আপলোড করুন। এরপর Preview অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে ফর্মের একটি প্রিভিউ চলে আসবে। সেক্ষেত্রে সমস্ত তথ্য ঠিক থাকলে Submit অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে ফর্মটি জমা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-

আবেদনকারীর ব্যাংকের পাস বই
জমির রেকর্ড
Sowing Certificate
Tenant Certificate

Leave a Comment