নিজের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে আজই আবেদন করুন সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায়।

আদিকাল থেকেই সমগ্র ভারতজুড়ে শিক্ষা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে নারীরা বরাবরই পিছিয়ে থেকেছে। যার কারণে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা থেকে শুরু করে মেয়েদের সমাজের সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলির রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের প্রচারমূলক অভিযান কার্যকর করা হয়েছে। আর তাতেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং স্কিমগুলি ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমগ্র দেশের নারী উন্নয়নের খাতিরে কার্যকরী এমনই এক স্কিম হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। কন্যা সন্তানকে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগণ্য করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতার যাতে কোনরূপ অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্যই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কার্যকর করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সারা দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছে এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা সম্পর্কিত তথ্যগুলি তুলে ধরতে চলেছি।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় আপনারা কি কি সুবিধা পাবেন:-

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় একজন ব্যক্তিকে তার কন্যা সন্তানের জন্য পোস্ট অফিসের অধীনে কিংবা তার পছন্দ অনুযায়ী ব্যাংকের আওতায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হয়। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার এই অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতাভুক্ত অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলেই সুকন্যা সমৃদ্ধি আওতায় বিনিয়োগকৃত টাকা সুদ সহ ফেরত পাওয়া যাবে। কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলে এই যোজনার সম্পূর্ণ টাকা উক্ত কন্যা সন্তান নিজের উচ্চশিক্ষার জন্য অথবা ব্যবসার ক্ষেত্রে কিংবা বিয়ের জন্য কাজে লাগাতে পারবেন।

এর পাশাপাশি ভারতীয় জনগণের উদ্দেশ্যে আরো জানিয়ে রাখি যে, কন্যা সন্তানের ১৮ বছর বয়স হলে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতাভুক্ত টাকার ৫০ শতাংশ তুলে নেওয়া সম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় একজন ব্যক্তি ৭.৬ শতাংশ হারে সুদ পেয়ে যাবেন। সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা থেকে আপনি কত টাকা ফেরত পাবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনি এই যোজনার অধীনে কত টাকা বিনিয়োগ করছেন তার উপরে। এর পাশাপাশি ৮০ সি ধারা অনুসারে আয়করের সুবিধাও মিলবে। এর পাশাপাশি আরও জানিয়ে রাখি যে, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট সমগ্র ভারতের যেকোনো পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যেতে পারে। এমনকি সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট যদি বন্ধ না করা হয় তবে যোজনার মেয়াদপূর্তির পরেও সুদ পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন:- কোন কোন খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে জেনে নিন।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি?

১. ভারতে বসবাসকারী যেকোনো ব্যক্তি তার ১০ বছরের চেয়ে কম বয়সী কন্যা সন্তানের নাম এই যোজনার আওতায় নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র ২ টি কন্যা সন্তানের জন্যই এই যোজনার আওতায় অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি প্রথম সন্তানের পর যমজ সন্তান জন্ম নেয় অথবা একই সাথে ৩ টি জন সন্তানের জন্ম হয়, তবে উক্ত ব্যক্তি তার তিনটি কন্যা সন্তানের নামই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় নথিভুক্ত করতে পারবেন।
৩. একের বেশি কন্যা সন্তানের জন্য আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক সিঙ্গেল একাউন্টের মাধ্যমে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় আবেদন জানাতে হবে। অর্থাৎ কোনরূপ জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই যোজনার আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব নয়।

কিভাবে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব?

ভারতের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আপনি সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য প্রকল্পের মত এই প্রকল্পের আওতায় কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করার কোনরকম অনলাইন প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়নি। শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে এই যোজনার আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব। আপনার পছন্দ অনুসারে যেকোনো ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় কন্যা সন্তানের নাম রেজিস্টার করার জন্য আপনাকে যে যে ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে, তা হলো:

১. প্রথমেই আপনি যে ব্যাংকের আওতায় সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে চাইছেন সেই ব্যাংকের যেকোনো শাখায় অথবা আপনার নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে।
২. এরপর ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত তথ্যগুলি নির্ভুলভাবে পূরণ করে নিয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি সহকারে ফর্মটি উক্ত পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাংকে জমা করুন।
৩. তারপর সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে যেকোনো আমানতের টাকা জমা করুন। এক্ষেত্রে এই টাকাটি সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা হিসেবে নেওয়া হবে।
৪. উপরোক্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পরেই আপনার সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্টটি অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে এবং আপনাকে উক্ত ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের তরফে একটি পাস বই প্রদান করা হবে।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি নথি প্রয়োজন হবে?

১. কন্যা সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট।
২. আবেদনকারী পিতা অথবা মাতা কিংবা অভিভাবকের ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ।
৩. আবেদনকারী পিতা কিংবা মাতা অথবা আইনসম্মত অভিভাবকের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৪. কন্যা সন্তানের পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবকের প্যান কার্ড ও ভোটার কার্ড।
৫. একইসাথে একাধিক সন্তানের জন্ম হলে তার প্রমাণস্বরূপ কন্যা সন্তান যে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে সেই হাসপাতালের তরফে জারি করা মেডিকেল সার্টিফিকেট।
এই সমস্ত ডকুমেন্টের পাশাপাশি আপনি যে ব্যাংকে অথবা পোস্ট অফিসে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে চাইছেন সেই ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের তরফে অন্য কোন নথি চাওয়া হলে সেই সমস্ত নথিও আবেদনপত্রের সাথে জমা করতে হবে।

Leave a Comment