পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মহিলারা বরাবরই পুরুষদের তুলনায় বেশি অবহেলিত হয়ে থাকেন। যার কারণে সারা ভারতের জনসংখ্যার একটি বিশেষ অংশ সমাজের অন্যান্য মানুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। ফলত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই নারী শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। আর তাই সারা দেশের নারীদের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য নানাবিধ প্রকল্প, যোজনা, স্কিম কার্যকর করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী স্কলারশিপগুলির মধ্যে মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল স্কলারশিপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে এই স্কলারশিপটি বর্তমানে সমগ্র দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বেগম হজরত মহল স্কলারশিপ নামেই বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছে। আর আজকের এই পোস্টে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী এই বিশেষ স্কলারশিপ সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
চলুন তবে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কারা বেগম হজরত মহল স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন:-
১. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, কেবলমাত্র ৬ টি বিশেষ সংখ্যালঘু শ্রেণীভুক্ত ছাত্রীরাই মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল স্কলারশিপ বা বেগম হজরত মহল স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, মুসলিম, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং পার্সি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
২. নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন, এমনটাই জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায়।
৩. বেগম হজরত মহল স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে বিগত পরীক্ষায় নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
৪. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় কম তারাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৫. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকরী অন্য কোনো SC/ ST/ OBC/ মাইনরিটি স্কলারশিপের আওতায় কোনোরকম সুবিধা পান না, তারাই কেবলমাত্র স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৬. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত একই পরিবারের সর্বাধিক ২ জন ছাত্রী এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৭. যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে বিদেশে পড়াশোনা করছেন তারা কোনভাবেই এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবেন না।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের বিনিময়ে অনুদান পান।
অনুদান:-
এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত নবম এবং দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীরা ৫০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীরা ৬০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
১. মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল স্কলারশিপ বা বেগম হজরত মহল স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আপনাকে প্রথমেই মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://www.maef.nic.in/scholarship-scheme -এ যেতে হবে।
২. এরপর হোম পেজের ডানদিকে থাকা মেনু বারে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে যে অপশনগুলি আসবে তার মধ্যে থেকে Schemes অপশনটি নির্বাচন করে নিন। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে পুনরায় আপনার সামনে কতগুলি নতুন অপশন আসবে। এই সমস্ত অপশনগুলির মধ্যে থেকে আপনাকে Scholarship Scheme অপশনটি নির্বাচন করে নিতে হবে।
৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে থাকা To Apply Online অপশনে ক্লিক করুন এবং এরপর আপনার সামনে যে ফ্ল্যাশ মেসেজটি আসবে তাতে থাকা OK অপশনে ক্লিক করুন।
৪. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল https://scholarships.gov.in/ -এ রিডাইরেক্ট করা হবে এবং এই পোর্টালের মাধ্যমেই আপনাকে বেগম হজরত মহল স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
৫. এক্ষেত্রে আবেদনের জন্য আপনাকে ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালের হোম পেইজে থাকা Applicant Corner -এর আওতাভুক্ত New Registration অপশনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে থাকা CLICK HERE FOR SCHOLARSHIP SCHEMES HOSTED ON NSP FOR AY 2022-23 অপশনে ক্লিক করুন।
৬. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে একটি নতুন পেজ চলে আসবে, এই পেজের একেবারে নিচের থাকা তিনটি চেকবক্সে ক্লিক করুন এবং Continue অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনার সামনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এই ফর্মের প্রথমেই আপনাকে আপনার রাজ্য নির্বাচন করে নিতে হবে এবং এরপর আপনার নাম, জন্ম তারিখ, কোন ধরনের স্কলারশিপ আবেদনে ইচ্ছুক, মোবাইল নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে Register অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৭. রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেই আপনাকে একটি Application ID এবং Password প্রদান করা হবে। এরপর এই Application ID এবং Password -এর মাধ্যমে আপনাকে Login -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
৮. Login -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে আপনাকে আপনার পুরনো পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করে নিজের পছন্দ অনুসারে একটি নতুন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করে নিতে হবে।
৯. পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হলে আপনার সামনে উক্ত স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এক্ষেত্রে ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত তথ্য সঠিক হবে পূরণ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিগুলি সঠিকভাবে আপলোড করে ফর্মটি সাবমিট করলে আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিসমূহ:-
১. স্কুল ভেরিফিকেশন ফর্ম।
২. আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর বিগত পরীক্ষার মার্কশিট।
৩. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৪. আধার কার্ডের প্রতিলিপি।
৫. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত প্রকার তথ্য।