সমগ্র ভারতব্যাপী দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সাথেসাথেই ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসার খরচও ক্রমাগত হারে বাড়ছে। যার কারণে বহু ক্ষেত্রের সাধারণ মানুষ বারংবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাতে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই নিজেদের নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করাতে পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এক বিশেষ প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী বিশেষ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা বা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নামেই সমগ্র ভারতে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে কার্যকর এই প্রকল্পটি জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মিশন নামেও পরিচিত লাভ করেছে। সারা ভারতের প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। ভারতে বসবাসকারী প্রতিটি সাধারণ মানুষ যাতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা করাতে পারেন তা নিশ্চিত করাই এই প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা বা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বিশেষ উদ্দেশ্য।
সমগ্র ভারতবাসী কি কি সুবিধা পাবেন:-
১. প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা বা আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় থাকা প্রতিটি ভারতীয় পরিবার প্রত্যেক বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পেয়ে যাবেন।
২. এই যোজনার আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্ধারিত ১৩৫০ টি মেডিকেল প্যাকেজ রয়েছে যার মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকরা ওষুধ, রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা এবং যাতায়াত-সহ চিকিৎসা এবং ডে কেয়ার চিকিৎসা সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরিষেবা পেয়ে থাকেন।
৩. যেকোনো জরুরি অবস্থা চলাকালীন এই যোজনার আওতায় থাকা সুবিধাভোগীরা সমগ্র ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির অধীনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়ে যাবেন। এমনকি জেলা হাসপাতাল সহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ পাওয়া যাবে এরূপ হাসপাতালকেও প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৪. আয়ুষ্মান যোজনার আওতায় থাকা একটি পরিবারের সমস্ত সদস্যই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের বয়সের জন্য আলাদা করে নিয়ম নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কন্যা সন্তান, মহিলা এবং বয়স্ক নাগরিকরা এই যোজনার আওতায় অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
৫. এই যোজনার আওতায় সম্পূর্ণ কাগজবিহীন এবং ক্যাশবিহীন চিকিৎসা হয়ে থাকে। সুতরাং প্রয়োজনকালে শুধুমাত্র আয়ুষ্মান ভারত কার্ডের মাধ্যমে আপনি এই যোজনার সমস্তরকম সুবিধা পেয়ে যাবেন।
৬. কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুসারে আয়ুষ্মান যোজনার আওতাভুক্ত দীর্ঘমেয়াদি রোগের রোগীদের কোন হাসপাতাল ফেরাতে পারবে না। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আরো জানানো হয়েছে যে, এই যোজনার আওতাভুক্ত কোন ব্যক্তি থেকে চিকিৎসার কোনরূপ খরচ নেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:- রেশন কার্ড বাতিল করতে চান? আবেদন জানান এই পদ্ধতিতে।
কারা প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
গ্রামে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে:- কেন্দ্র সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে ভারতে বসবাসকারী তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিভুক্ত পরিবারগুলি এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এর পাশাপাশি যে সমস্ত পরিবারের ১৬ বছর থেকে শুরু করে ৫৯ বছর বয়সী কোনো পুরুষ সদস্য নেই তারাও এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে যাবেন। অন্যদিকে যে সকল পরিবারের ১৬ বছর থেকে শুরু করে ৫৯ বছর বয়সী কোন প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য নেই সেই সমস্ত পরিবারগুলিও আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। নাগরিকদের সুবিধার্থে আরও জানিয়ে রাখি যে, যেসকল পরিবারে কমপক্ষে একজন প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এবং পরিবারে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য নেই তারাও এই যোজনার আওতায় সমস্তরকম পরিষেবা পেয়ে যাবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য আরো জানানো হয়েছে যে, যে সমস্ত ভারতীয় নাগরিক ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছেন তারা এই যোজনার সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে যে সমস্ত ভূমিহীন পরিবারগুলি দিনমজুর রুপে কাজ করে জীবনযাপন করে থাকেন তারাও এই যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। আদিম উপজাতিগোষ্ঠী, ম্যানুয়াল স্ক্যাভেনজার পরিবার থেকে শুরু করে যে সমস্ত পরিবারগুলি এক কামরার অস্থায়ী বাড়িতে বসবাস করছেন তারাও এই যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
শহরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে:- শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ভিক্ষুক, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে ওয়াশার ম্যান, চৌকিদার, সুইপার, স্যানিটেশন কর্মী, মালি, বৈদ্যুতিক কর্মী, মেকানিক, অ্যাসেম্বলার, মেরামত কর্মী, গৃহভিত্তিক কর্মী, কারিগর, হস্তশিল্প কর্মী, দর্জি, নির্মাণ শ্রমিক, প্লাম্বার, রাজমিস্ত্রি, চিত্রশিল্পী, ওয়েল্ডার, নিরাপত্তা প্রহরী, কুলি, লোড শ্রমিক, মুচি, ফেরিওয়ালা, পরিবহন কর্মী, ড্রাইভার, ড্রাইভার ও রিকশাচালক, দোকানের কর্মী, সহকারী, ছোট প্রতিষ্ঠানে পিওন, হেল্পার, ডেলিভারি সহকারী, পরিচারক, ওয়েটার, ফেরিওয়ালা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
কিভাবে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন:-
প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমেই নিজের বাড়ির নিকটবর্তী একটি CSC কেন্দ্রে যেতে হবে। CSC কেন্দ্রের মাধ্যমেই আপনি প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি আপনার জেলা অফিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি সহকারে CSC বা জেলা অফিসে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানকার আধিকারিকদের মাধ্যমে জন আরোগ্য যোজনার ফর্মটি পূরণ করতে হবে। ফর্মটি সাবমিট করা হলেই জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি নথি প্রয়োজন হবে:-
১. আবেদনকারীর আইডেন্টিটি প্রুফ (আধার কার্ড প্যান কার্ড)।
২. আবেদনকারীর বয়সের প্রমাণপত্র
৩. স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র
৪. কাস্ট সার্টিফিকেট
৫. ইনকাম সার্টিফিকেট
৬. পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতির প্রমাণপত্র (আপনার পরিবার যৌথ পরিবারের বা জয়েন্ট ফ্যামিলি নাকি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তা সম্পর্কে উল্লেখ করতে হবে)
৭. আবেদনকারীর আধার কার্ড