সমগ্র ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বসবাসকারী সাধারণ দরিদ্র নাগরিকরা তাদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে সঠিকভাবে শিক্ষিত হতে পারেন না। বিশেষত সমগ্র ভারত সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী নানাবিধ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আওতাভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে স্কুলের বদলে নানাবিধ কাজের জায়গায় নিজেদের নাম লেখাতে বাধ্য হন। যার কারণে বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকার সহ ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ধরনের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আওতাভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ এবং প্রকল্প চালু করেছে। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেও তপশিলি জাতি এবং উপজাতি সহ অন্যান্য বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প এবং স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হল শিক্ষাশ্রী প্রকল্প। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, রাজ্য সরকারের কার্যকরী শিক্ষার্থী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে বেশ কতগুলি যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকর এই শিক্ষাশ্রী প্রকল্প এবং শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা, আবেদনের প্রক্রিয়া এবং আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না জানার কারণে এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারেন না। যার ফলস্বরূপ আজ আমরা শিক্ষাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা কি কি?
১. রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবলমাত্র এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত সরকারি এবং সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলির আওতায় থাকা পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরাই কেবলমাত্র এই শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাবেন।
৩. শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেয়ে কম হতে হবে।
৪. কেবলমাত্র তপশিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার্থী প্রকল্পের আওতায় অনুদানের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
৫. বিগত বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৬. ছাত্রাবাস বা হোস্টেলে বসবাসকারী ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাবেন না।
৭. অন্যদিকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকারী প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন তারা এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না।
শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় ছাত্রছাত্রীরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত তপশিলি জাতি এবং উপজাতি ভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের ৭৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক অনুদান পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী কোন শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন তার ওপর নির্ভর করে তাকে বার্ষিক অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠরত তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেক বছরে ৭৫০ টাকা করে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠরত পাঠরত তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবছরে ৭৫০ টাকা করে, সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত পাঠরত তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবছরে ৭৫০ টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত তপশিলি জাতি ও উপজাতি ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছরে ৮০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিক্ষার্থী প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রকল্পের অনুদান সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেয়ে থাকেন।
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রক্রিয়াতেই শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব। প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী অনগ্রসর শ্রেণীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.anagrasarkalyan.gov.in -এ যেতে হবে। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তার একেবারে নিচের দিকে থাকা Scholarship Application for class V-VIII Students অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে আপনাকে ইউজার টাইপ, ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে পূরণ করে লগইন অপশনে ক্লিক করতে হবে, তাহলেই আপনার সামনে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে।
তবে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আপনার নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে তা কেবলমাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। সুতরাং অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভূক্তকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আপনাকে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিতে হবে। অন্যদিকে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রেও আপনাকে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং এই প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত ফর্মটি পূরণের ক্ষেত্রে ফর্মের একেবারে শুরুতেই উল্লিখিত আবেদনকারী শিক্ষার্থীর নাম, পিতা অথবা মাতার নাম, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর, কাস্ট, সাব কাস্ট সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
এরপর আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর স্থায়ী ঠিকানা, পিতা, মাতা অথবা অভিভাবকের নাম, উক্ত ব্যক্তির পেশা এবং স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এরপর উক্ত ছাত্র অথবা ছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য, উক্ত ছাত্র ও ছাত্রী বর্তমানে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত তার নাম, ঠিকানা, বর্তমানে কোন শ্রেণীতে পাঠরত, কবে উক্ত শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, ইতিপূর্বে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান পেয়েছেন কিনা এবং রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী অন্য কোন স্কলারশিপের অনুদান পেয়েছেন কিনা তা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। সবশেষে আবেদনকারী ছাত্রী অথবা ছাত্র এবং আবেদনকারীর পিতা অথবা মাতা কিংবা অভিভাবককে স্বাক্ষর করতে হবে, তাহলেই ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আধার কার্ড।
২. পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৩. কাস্ট সার্টিফিকেট বা জাতিগত শংসাপত্র।
৪. স্কুল সার্টিফিকেট।
৫. স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৬. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য।
৭. আবেদানকারী ছাত্র অথবা ছাত্রের পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই শিক্ষাশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মহলের কর্তা ব্যক্তি সহ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্র অথবা ছাত্রীরা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের হারও বাড়বে। এমনকি এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যবাপী তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ছুটের হার কমানো যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে।