বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এক অদ্ভুত রোগ দেখা যায়, আর তা হল সমস্ত কিছু ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। আর পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা বিরাট আকার ধারণ করে নানা ধরনের জটিল মনোরোগের সৃষ্টি করে। এমনকি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাওয়ার কারণে এই সমস্ত ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তবে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় তা নয়, বহুক্ষেত্রেই ছোট শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী এমনকি যুবক-যুবতীদের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের তথ্য থেকে শুরু করে পড়াশোনা মনে রাখতে পারেন না, পড়া ভুলে যাওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ারও যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। যার জেরে বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীমহলে চর্চার শেষ নেই।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসারে, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি ছোট ছোট অভ্যাসে বিশেষ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এমনকি নানাবিধ তথ্য সহজে মনে রাখার জন্য এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজন যেগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা অত্যন্ত সহজেই সমস্ত কিছু মনে রাখতে পারবো এবং মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বাড়বে। ইতিমধ্যেই কিভাবে ভুলে যাওয়ার প্রবণতার কমানো সম্ভব এবং কিভাবে সহজেই বিভিন্ন তথ্য মনে রাখা সম্ভব তা জানতে সারা দেশের জনগণ রীতিমতো উৎসুক হয়ে উঠেছেন। আর তাই আজকের এই পোষ্টে আমরা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কতগুলি বিশেষ উপায় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
কোন কোন অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে আপনারা আপনাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারবেন:-
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করুন:- অনেকক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কোর্সের প্রয়োজনে একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রীকে একইসঙ্গে একাধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু যখন পড়তে বসবেন তখন যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ প্রথমেই নির্ধারণ করে নিন আপনি সারাদিনের কোন সময় কোন বিষয়টি পড়তে চাইছেন। আর এরপর ওই নির্দিষ্ট সময়েই শুধুমাত্র একটি বিষয় মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং পড়া আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করুন। সুতরাং ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং মনোযোগ সহকারে সেই সমস্ত লক্ষ্যগুলি পূরণের মাধ্যমে আপনি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পড়া মনে রাখতে পারবেন।
২. অতিরিক্ত চাপ নেবেন না:- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার ঠিক আগে প্রচুর সংখ্যক বিষয় একইসাথে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা সারাবছর বিশেষভাবে পড়াশোনা না করলেও পরীক্ষার ঠিক আগেই সারাদিন রাত জেগে পড়াশোনা করেন এমনকি একই সঙ্গে বহু সংখ্যক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে থাকেন। কিন্তু মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা আছে এবং মস্তিষ্ক নিজের ধারণক্ষমতা অনুসারেই কাজ করবে। ফলত একইসাথে প্রচুর তথ্য মনে রাখতে গেলে আপনি কিছুই মনে রাখতে পারবেন না, এক্ষেত্রে সমস্ত তথ্যই ভুলে গেলেও অবাক হবার কিছু নেই। সুতরাং পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পড়া আয়ত্ত করুন এবং অনেক বেশি সময় নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিন তবেই আপনি সমস্ত তথ্য মনে রাখতে পারবেন এবং আপনার পরীক্ষাও ভালো হবে।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন আদিত্য বিড়লা ক্যাপিটাল কোভিড স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান সর্বোচ্চ ৬০০০০ টাকা অনুদান।
৩. নিজের ভাষায় অনুবাদ করে মনে রাখার চেষ্টা করুন:- বহু ক্ষেত্রেই কোর্সের প্রয়োজনে ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের মাতৃভাষা ব্যতীত ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষায় পড়াশোনা করতে হয়। এক্ষেত্রে পড়ার বিষয়গুলি আয়ত্তে রাখার ক্ষেত্রে ভাষা একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সহজেই সমস্ত বিষয়গুলি ভুলে যেতে থাকেন। সুতরাং যেকোনো বিষয়কে ভালোভাবে মনে রাখার জন্য আপনাকে সমস্ত বিষয়টিকে নিজের মাতৃভাষায় অনুবাদ করতে হবে এবং সমগ্র বিষয়টির ধারণা আয়ত্ব করতে হবে।
৪. প্রতিদিন সকালে উঠে ব্যায়াম করুন:- ব্যায়ামের ফলে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে। এমনকি ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে থাকে। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। অন্যদিকে ব্যায়ামের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্ভাবনা কমে। ফলত সুস্থ শরীরে যে বিষয়টি নিয়েই পড়াশোনা করা হোক না কেন তা অত্যন্ত সহজেই মনে রাখা যায়।
৫. প্রতিদিনের খাবারে আনুন বিশেষ কিছু পরিবর্তন:- ব্লুবেরি, লাল আঙ্গুরের মধ্যে অ্যান্থোসায়ানিন নামক এক বিশেষ ধরনের উপাদান থাকে যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ব্ল্যাকবেরি, প্লাম এবং লাল বাঁধাকপিও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী খাদ্য। এছাড়াও আপনার প্রত্যেকদিনের খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ, বাদাম ও অন্যান্য ধরনের বীজ, ওটস, ডিম, পালং শাক, বিট, ব্রকলি টমেটো -এর মতো উপাদানগুলি রাখুন, এগুলি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়তা করবে।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম:- স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘুম আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে যা আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমান।
৭. মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেটে সময় কাটানো বন্ধ করুন:- সারাদিন মোবাইল, ল্যাপটপের বিভিন্ন গেম থেকে শুরু করে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতে সময় নষ্ট না করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সারাদিন আমরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম -এর মত সাইটগুলোতে নানা ধরনের মজাদার ভিডিও থেকে শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের ছবি, বিভিন্ন প্রকার তথ্য এবং খবরও পড়ে থাকি। ফলত পড়াশোনা সংক্রান্ত তথ্য মনে রাখার বদলে এই সমস্ত তথ্যগুলো আমাদের মনে থেকে যায়। আর এই সমস্যা এড়াতে অবশ্যই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। এর ফলে একদিকে যেমন আপনার শরীর সুস্থ থাকবে, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই আপনার পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুবিধা হবে।
৮. বই পড়ার সময় মনযোগে ব্যাঘাত ঘটে এমন বস্তুগুলোতে দূরে রাখুন:- বই পড়ার সময় মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে গল্পের বই, নানা ধরনের ইনডোর গেমসের সরঞ্জাম দূরে রাখুন। এই সমস্ত উপাদানগুলি একদিকে যেমন আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে অন্যদিকে পড়াশোনায় মনোনিবেশের ক্ষেত্রেও বাধা দেয়। যার ফলে এই সমস্ত বস্তুগুলি সামনে থাকলে একটানা বেশিক্ষণ পড়া যায় না, এমনকি পড়লেও যে তথ্যগুলি আপনি পড়ছেন সে সমস্ত তথ্য মনে রাখা যায় না। সুতরাং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং সহজে পড়াশোনা মনে রাখতে এই বস্তুগুলিকে দূরে রাখুন।
৯. ঘুমানোর পূর্বে সমস্ত কিছু মনে করার চেষ্টা করুন:- বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, ঘুমোনোর পূর্বে সারাদিনে আপনি কি কি করেছেন অথবা আগামী দিনে আপনি কি কি করতে চলেছেন, কোন সময় কোন কাজটি করবেন এই সমস্ত তথ্যগুলি মনে করার চেষ্টা করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠার জন্য ঘুমানোর পূর্বে বেশ কিছুক্ষণ বই পড়তে পারেন, যদি তা না হয় তবে সারাদিনে কি কি পড়লেন সেই সমস্ত তথ্যগুলি মনে করার চেষ্টা করতে পারেন।
১০. নির্দিষ্ট রুটিন ধরে কাজ করুন:- স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে কাজ করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা সহ নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলি করার চেষ্টা করুন। ফলত আপনার ব্রেন এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং সহজেই বিভিন্ন তথ্যগুলিকে মনে রাখতে পারবে। এর ফলে একদিকে যেমন আপনি সমস্ত কাজগুলি সময়ে শেষ করতে পারবেন অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই আপনার স্মৃতিশক্তিও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।