মানুষ কিভাবে সুস্থ শরীরে বাঁচতে পারে তা নিয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী গবেষণায় নিযুক্ত রয়েছেন বৈজ্ঞানিকেরা। আর এই সকল বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা অনুসারে, মানুষের জীবনযাত্রা এবং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার ওপর মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। আর তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য এবং সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং সুস্থ জীবনযাপন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর পাশাপাশি গবেষণায় আরো জানা গিয়েছে যে, এমন বেশ কিছু খাদ্য রয়েছে যেগুলি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারবে। আর আজকের এই পোস্টটিতে আমরা এই সমস্ত খাদ্যগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি।
কোন কোন খাদ্য প্রতিনিয়ত খাওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে:-
১. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য রাখুন:- দুধ, দই, ঘি -এর মত দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্যগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট থাকে যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশু থেকে বয়স্ক প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এই সমস্ত খাদ্যগুলি যেমন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ঠিক তেমনভাবেই হাড়ের শক্তিও বৃদ্ধি করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশু এমনকি প্রাপ্ত বয়স্কপ্রাপ্ত নাগরিকরাও দুধ খেতে পছন্দ করেন না তারা মিল্ক শেক বানিয়ে খেতে পারেন। অনেকে আবার শুধু দই খেতে পছন্দ করেন না তাদের জন্য জানিয়ে রাখি যে, আপনারা টাটকা ফলের সঙ্গেও দই খেতে পারেন। টাটকা ফলের সাথে দই খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
২. ভিটামিন সি রয়েছে এইরূপ খাদ্য দ্রব্যগুলি প্রতিনিয়ত খান:- যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন সি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। সুতরাং এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। আর আমাদের প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় বেশ কিছু বিশেষ উপাদান যোগ করলেই প্রতিনিয়ত কোনরকম সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই দেহের ভিটামিন সি -এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক, লেটুস শাক সহ যেকোনো সবুজ শাক, বাঁধাকপি, স্প্রাউট, স্ট্রবেরি, পেঁপে, কমলা, ব্রকলি, পেয়ার, আলুর মত সবজিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও কাঁচালঙ্কা ক্যাপসিকাম জোয়ান সরষে শাক, পাতিলেবু, কমলা লেবু, বাতাবি লেবু সহ যেকোনো প্রকার লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য এই সমস্ত খাদ্যগুলি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।
৩. ব্রেকফাস্টে থাকুক চিয়া সিড কিংবা ওটমিল:- ওটমিলে প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক থাকে যা আপনার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে পুষ্টি যোগায় এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলস্বরূপ জানা গিয়েছে যে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট থাকে যা স্তন ও কোলনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে এইখানেই শেষ নয়, প্রতিনিয়ত ওটমিল খেলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনাও যথেষ্ট কমে যায়। অন্যদিকে চিয়া সিডে ভিটামিন সি থাকে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং প্রতিদিনের ব্রেকফাস্টে ওটমিল কিংবা চিয়া সিড খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি শরীরের পুষ্টিগুণের অভাবও পূরণ হবে যা আপনার শরীরকে আরও সুস্থ করে তুলবে।
আরও পড়ুন:- স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করবেন কিভাবে? জেনে নিন পদ্ধতি।
৪. প্রতিনিয়ত সবুজ শাকসবজি খান:- ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম, শতমূলী, শিম, বরবটি, করলা, শসা, সবুজ রঙের শাক, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা মত সবজি গুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াবে। এছাড়াও এই সবজিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে -এর পাশাপাশি থাকে নানা ধরনের খনিজ উপাদান ও ফাইবার যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং শরীরের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সবুজ শাকসবজি খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে কমে যায়, ফলত হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকিও কমে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ থাকতে প্রতিনিয়ত সবুজ শাকসবজি খান।
৫. খাদ্য তালিকায় থাকুক সামুদ্রিক মাছ:- বাঙালি বরাবরই মাছ খেতে পছন্দ করে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সামুদ্রিক মাছের জুড়ি মেলা ভার। ইলিশ, কোরাল, চিংড়ি, লইট্টা এই সমস্ত সামুদ্রিক মাছগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সেলুনিয়াম নামক এক খনিজ লবণ থাকে যা দেহের শ্বেতকণিকা এবং ইমিউনিটি পাওয়ার বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই মাছগুলিতে থাকা মিনারেল, ভিটামিন, জিংক, আয়োডিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং নার্ভের উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে।
৬. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে মশলা:- রসুন, আদা, হলুদ, লঙ্কা, লবঙ্গ, গোল মরিচ, দারুচিনির মত মশলাগুলি আপনার শরীরের নানার রোগ দূর করার সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা সর্দি-কাশি, ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং সুস্থ থাকতে প্রতিদিন গরম জলের সাথে হলুদ মিশিয়ে খান অথবা দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খান। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ এবং সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধের সহায়তা করে থাকে গোলমরিচ। এর পাশাপাশি গোলমরিচ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং রেসপিরেটরি ইনফেকশন থেকে মুক্তি দেয়। সুস্থ থাকতে চায়ের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও উপরোক্ত মশলাগুলির নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে যা আপনাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুস্থ থাকতেও সহায়তা করবে।
৭. সুস্থ থাকতে ভেষজ উদ্ভিদ:- তুলসী, অশ্বগন্ধা, বাসক, চিরতা, নিন, থানকুনি সহ অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদগুলির পাতা, কান্ড এবং মূল আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি এই সমস্ত উদ্ভিদের বিশেষ ভেষজ গুণাগুণ থাকে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আপনার শরীরের নানা ধরনের রোগ দূর করতেও সাহায্য করবে। অতিরিক্ত ঠান্ডা কমাতে তুলসী অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও থানকুনি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এবং চুল ঝরা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে চিরতা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত সুষম খাদ্যের পাশাপাশি এই সমস্ত ভেষজ উদ্ভিদের বিশেষ বিশেষ অংশ খেলেও আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে।