বর্তমান সময়ে অনিয়ন্ত্রিত হারে ওজন বৃদ্ধির কারণে প্রচুর মানুষ নানারকম শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। বহু মানুষই বর্তমান স্থূলতা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা জানার জন্য রীতিমতো উৎসুক হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, লকডাউনের পর থেকেই ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। আর তাতেই সারাদিন ল্যাপটপ ফোন অথবা ট্যাবের সামনে বসে কাজ করার কারণে সাধারণ নাগরিকদের স্থূলতাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন ডাক্তারের মতামত থেকে জানা গিয়েছে যে, এমন বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলি মেনে চললে আপনারা অত্যন্ত সহজেই নিজের ওজন কমাতে পারবেন। আর আজকের এই পোস্টে আমরা ওজন কমানোর বিশেষ কতগুলি উপায় নিয়ে হাজির হয়েছি।
কিভাবে অত্যন্ত সহজে ওজন কমানো সম্ভব?
১. ওজন কমানোর জন্য প্রতিনিয়ত যোগ ব্যায়াম করুন:- ওজন কমানোর জন্য প্রত্যেকদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠে যোগ ব্যায়াম করুন। এতে একদিকে যেমন আপনার শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই আপনার মানসিক সুস্থতাও বজায় থাকবে। আর এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজনও কমবে। তবে আপনি যদি সকালে উঠে যোগ ব্যায়াম করার সুযোগ না পান, তবে আপনার নিকটবর্তী পার্কে কিংবা আপনার পছন্দের রাস্তায় হাঁটুন অথবা দৌড়ান, এছাড়াও আপনি আপনার বাড়ির ছাদে কিংবা উঠোনে হাঁটতে পারেন।
২. প্রতিনিয়ত নিয়োগ অনুসারে ওয়ার্ক আউট করুন:- ওজন কমানোর জন্য আপনার বাড়ির নিকটবর্তী জিমে গিয়ে ওয়ার্ক আউট করতে পারেন। এছাড়াও আপনি সাইকেল চালানো, লাফদড়ি খেলা, দৌড়ানো, ডান্স প্র্যাকটিস করা কিংবা সাঁতার কাটার মাধ্যমেও ওজন কমাতে পারবেন। তবে আপনি যে বিষয়টি অনুশীলন করছেন সেটি প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে দিনে অন্ততপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট ওয়ার্ক আউট করা আবশ্যক। ওজন কমানোর জন্য আপনি আপনার পছন্দ অনুসারে অ্যাক্টিভিটি নির্ধারণ করে নিয়ে প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট ওয়ার্ক আউট করুন।
৩. ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের দিকে বিশেষভাবে নজর দিন:- ওজন কমানোর জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাদ্য, ডিম, নানা ধরনের মরশুমী ফল এবং বাদাম ও স্যালাড অবশ্যই রাখুন। ডাক্তারের মতে স্যালাড এবং নানা ধরনের মরশুমী ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আপনার পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা রাখবে। শুধু তাই নয় ফল এবং স্যালাড ওজন কমাতেও সহায়তা করে। এছাড়াও সবুজ শাকসবজি এবং ফলে থাকা ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থ শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বস্তু রাখলে তা হজম হতে যথেষ্ট সময় লাগে, ফলত আপনার পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। যার কারণে খিদে কম পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছোট মাছ, চিকেন এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন রাখুন।
আরও পড়ুন:- পুলিশ হওয়ার জন্য কি নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, জেনে নিন।
৪. নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করুন এবং ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করুন:- সম্ভব হলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্রেকফাস্ট, মিল এবং ডিনার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অনেকেই মনে করেন ব্রেকফাস্ট কিংবা ডিনার স্কিপ করলে ওজন দ্রুত কমবে, কিন্তু তা কখনোই হয় না। তাই এই সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা দূরে রেখে আপনার ডায়েট চার্ট অনুসারে প্রত্যেক দিন ঠিক সময় মত খাবার খান। সম্ভব হলে ফাস্টফুড এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। ফাস্ট ফুডে থাকা অতিরিক্ত তেল এবং চর্বি ওজন অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি করে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে ফাস্টফুড এবং চর্বি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য বর্জন করুন। এছাড়াও অসময়ে খাবার খাওয়ার মত অভ্যাসগুলি ত্যাগ করুন। এক্ষেত্রে বাইরে যাওয়ার আগে কিছু হালকা খাবার খেয়ে বেরোন, এতে বাইরে বেরিয়ে ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা কমবে, সুতরাং আপনার ওজনও কমবে।
৫. প্রত্যেকদিন নিয়মমাফিক ঘুমান:- শরীর এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে প্রত্যেকদিন নিয়মমাফিক ঘুমানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতরাং প্রত্যেকদিন রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওঠার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন প্রত্যেকদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন নিয়মমাফিক না ঘুমালে অথবা রাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমালে ওজন কমার পরিবর্তে ওজন বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে খাওয়া দাওয়া এবং ঘুম ঠিক রাখুন।
৬. লেবু এবং গ্রিন টি-তেই মিলবে অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি:- আয়ুর্বেদ মতে প্রত্যেক দিন সকালে হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে অত্যন্ত দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। তবে যে সমস্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির ধাত রয়েছে তারা এই টোটকায় কোনোরকম উপকার পাবেন না বরং উল্টে অপকার হতে পারে। এছাড়াও যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তাদের জন্য গ্রিন টির জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং আপনিও যদি অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে চান তবে প্রত্যেকদিন সকালে গ্রিন টি পান করুন। গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল এটি পান করলে কোনোরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না এবং এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের উপকারেও লাগে।
উপরোক্ত বিষয়গুলিকে নজরে রেখে বলা যায় যে, প্রতিনিয়ত ওয়ার্কআউট এবং যোগ ব্যায়াম করলে অত্যন্ত দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। এর পাশাপাশি ডায়েটের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিলে এবং প্রতিদিন রুটিন মেনে খাওয়া দাওয়া করলে এবং ঘুমালে ওজন কমানো এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়।