অলসতা দূর করতে চান? জেনে নিন অলসতা দূর করবার আটটি সহজ পদ্ধতি।

সকালে ওঠার পর থেকেই অধিকাংশ মানুষই একটি নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে দিন শুরু করেন, কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় সেই টার্গেট পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। আর সমস্ত দিনের কোন কাজই সম্পূর্ণ না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অলসতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সারাদিনের কাজকর্ম প্ল্যান করার পরেও অলসতার কারণে কিছুই করা হয়ে ওঠেনা। আর এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ঠিক তেমনভাবেই যেকোনো ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিরাও নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন, যার কারণে তাদের কর্মদক্ষতাও প্রভাবিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই একই সমস্যার কারণে বারংবার অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হতে থাকে। সুতরাং নিজের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য অলসতা কাটিয়ে ভালোভাবে কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ জানেন না যে এমন বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে তার মাধ্যমে তারা অত্যন্ত সহজেই নিজের অলসতা দূর করতে পারবেন।

চলুন তবে অলসতা দূর করার এই সমস্ত বিশেষ ট্রিকসগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-

১. ঘুমোনোর অনিয়ম দূর করুন:- অলসতা দূর করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে আপনার ঘুমের অনিয়ম দূর করতে হবে। এর জন্য রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে রাত জাগার ফলে ইনসোমেনিয়া সহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। আর তাই সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি আরো মনে রাখতে হবে যে, ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্য আপনাকে প্রতিদিন একই সময় ঘুমোতে হবে। রাতে আলাদা আলাদা সময় ঘুমিয়ে ৬ ঘন্টা ঘুম পূরণ হওয়ার আগেই নিজের প্রয়োজন মাফিক সময়ে উঠতে চাইলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে। আর সঠিকভাবে ঘুম না হলে সকালবেলাই শরীরে অলসতার সৃষ্টি হয়, যার ফলে সারাদিনের বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

২. সকালে উঠে গ্রিন টি পান করার চেষ্টা করুন:- গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা অলসতা দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় গ্রিন টি -তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেকোনো মানুষের কাজে স্ট্রেস থেকে শুরু করে অন্যান্য মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে গ্রিন টি পান করার মাধ্যমে নিজের দিন শুরু করলে অলসতা থেকে মুক্তি পাবেন। একদিনে সর্বোচ্চ ২ বার গ্রিন টি পান করতে পারেন।

৩. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন:- অলসতা কাটানোর সব থেকে সহজ উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে জল পান করা। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডিহাইড্রেশন থেকে ক্লান্তি বোধহয় আর তা থেকেই অলসতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে অলসতা থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়া জলের বদলে বারবার লেবু শরবতও পান করতে পারেন। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ক্লান্তি এবং অলসতা দূর করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:- আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে জেনে নিন এখনই।

৪. মানসিক চাপ কমান:- অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক চাপের কারণেও কাজের ক্ষেত্রে অনীহা এবং অলসতা দেখা দেয়। সুতরাং যতটা সম্ভব মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই আপনি অলসতা কাটিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবেন। মানসিক চাপ কমানোর জন্য কাজের চাপ কমানো অত্যন্ত জরুরি। কাজের চাপ কমানোর ক্ষেত্রে আপনি সারাদিনে কি কি কাজ করতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করে নিন এবং সেই তালিকা অনুসারে পরপর কাজগুলি করুন। এর ফলে একসাথে অনেকগুলি কাজ জমা হয়ে কাজের চাপ বাড়াবে না, আর আপনি নিশ্চিন্ত মনে ধীরে ধীরে নিজের কাজগুলি সম্পন্ন করতে পারবেন।

৫. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:- আপনার কাজ শুরু করবার পূর্বে সারাদিনে আপনার কি কি কাজ রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করুন। এক্ষেত্রে আপনি কোন সময়ের মধ্যে কোন কাজটি সম্পন্ন করতে চান তা সঠিকভাবে উল্লেখ করবেন এবং এই তালিকা অনুসারী কাজ করবেন। এর ফলে অলসভাবে সময় কাটানোর প্রবণতা কমবে। দিন শুরু করবার পূর্বে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সারাদিনের কাজের মধ্যে দিয়ে আপনার লক্ষ্য পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করুন, তবেই আপনার অলসতা দূর হবে। অলসতার কারণে যে কাজগুলো করা হয়ে ওঠেনি সেই কাজগুলির ইতিবাচক দিক নির্ধারণ করুন। অর্থাৎ এই কাজগুলি সম্পন্ন করলে আপনি কিভাবে লাভবান হবেন তা নির্ধারণ করুন এবং সারাদিনের কাজের মাঝে এই কাজগুলি সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। শুধুমাত্র সারাদিনের কাজের ক্ষেত্রে নয় যেকোনো নতুন অভ্যাস তৈরি করার ক্ষেত্রে অথবা দীর্ঘস্থায়ী যেকোনো রকম সমস্যার সমাধান করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ অবশ্যম্ভাবী।

৬. সকালে যোগ ব্যায়াম করুন:- অলসতা কাটানোর অন্যতম উপায় হল সকালে উঠে যোগ ব্যায়াম করা। সুতরাং আপনিও যদি আপনার দিনটি সক্রিয়ভাবে শুরু করতে চান তবে সকালে উঠে যোগ ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শুধুমাত্র অলসতা কাটানোর ক্ষেত্রে নয়, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও যোগব্যায়াম যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আপনার দিনটি ভালোভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যোগ ব্যায়াম শুরু করুন। তবে অনেকেই কাজের চাপের কারণে সকালে উঠে যোগ ব্যায়াম করার সময় পান না। আপনিও যদি নিজের কাজের মাঝে যোগ ব্যায়াম করার সময় না পান তবে সকালে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

৭. নিজের কাজগুলিকে আনন্দময় করে তুলুন:- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনোরকম ব্রেক ছাড়াই একটানা কাজ করার জন্য অলসতা দেখা দেয়। এর ফলে কাজ করার ইচ্ছা ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে। সুতরাং কর্মক্ষেত্রে অলসতা দূর করার জন্য কাজের ক্ষেত্রে ছোট ছোট পরিবর্তন করুন। আপনি যে জায়গাটিতে বসে কাজ করছেন সেই জায়গাটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করতে পারেন অথবা আপনি যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছেন সেই প্রক্রিয়ার বদলে অন্য কোন প্রক্রিয়ার কাজ করার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। এর ফলে কাজ যথেষ্ট আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। এছাড়াও আপনার পছন্দসই নতুন নতুন জিনিস শেখার মাধ্যমে নিজের স্কিল ডেভেলপ করুন যা আপনার কাজ করার আগ্রহকে আরো বেশি করে বাড়িয়ে দেবে।

৮. যে বিষয়গুলি থেকে অলসতা তৈরি হয় তা থেকে দূরে থাকুন:- বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ল্যাপটপ কম্পিউটার টেলিভিশন থেকে শুরু করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ মানুষের সর্বক্ষণের সঙ্গী। যার ফলে মানুষ নিজের স্বাভাবিক জীবনের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি করে সময় দিতে শুরু করেছে। আর এখানেই মূল সমস্যা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে মানুষের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা দেয়। সুতরাং অলসতা দূর করার জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সময় কাটানোর বদলে বই পড়ার অভ্যাস করে তুলুন, এর ফলে আপনার জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমন ভাবে নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জানার ইচ্ছাও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আপনার পছন্দসই নানারকম বিষয়বস্তু শেখার কোর্সে কিংবা আপনার কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নানাবিধ বিষয় সংক্রান্ত কোর্সে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়াও যে সমস্ত জিনিসগুলি থেকে আপনার অলসতা তৈরি হয় তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

Leave a Comment