শরীর এবং স্বাস্থ্য উভয়ই ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে জটিল শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বর্তমানে মানুষ এতটাই ব্যস্ত যে মানুষের কাছে ঘুমোনোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সময়টুকুও নেই। আবার অনেকেই ঘুমোতে চাইলেও ঘুমোতে পারেন না। ঘন্টার পর ঘন্টা বিছানায় শুয়ে থেকেও কোনোরকম লাভ হয় না। আর এর ফলে এই সমস্ত ব্যক্তিরা ইনসোমনিয়ার মত জটিল রোগের রোগী হয়ে পড়েন।
তবে এখানেই শেষ না, বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা না ঘুমালে কিডনি, লিভার, মানসিক অবসাদ, ডিমেনশিয়া, আর্থরাইটিসের মত হাজারো সমস্যার শিকার হতে হয়। আর এই সমস্ত তথ্য বারংবার প্রকাশ্যে আসায় কিভাবে ঘুমের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব তা জানতে রীতিমতো উৎসাহী হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
ঘুমের সমস্যার সমাধানের টিপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-
১. অভ্যাসের পরিবর্তন:- অধিকাংশ মানুষই জানেন না তাদের জীবনের কয়েকটি সহজ সরল অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই ঘুমের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। প্রতিদিন নির্বিঘ্নে ঘুমাতে গেলে রোজ একই সময় ঘুমাতে হবে এবং প্রত্যেকদিন সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। প্রত্যেকদিন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘুমাতে গেলে এবং অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা না ঘুমিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলে রাতে ঘুম আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেবে। অর্থাৎ এই সমস্ত অভ্যাসগুলিতে ছোট ছোট পরিবর্তন করলেই রাতে আপনি বিনা বাধায় ঘুমাতে পারবেন এবং সকালে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই উঠে যেতে পারবেন। এছাড়াও ঘুমানোর সময় যে বিশেষ বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হল, ঘুমানোর সময় ঘরের আবহাওয়া যেন গরম কিংবা বদ্ধ না হয়, ঘুমোনোর সময় ঘর অত্যন্ত গরম হলে ঘুমোতে সমস্যা হয়। এর পাশাপাশি ঘুমোনোর সময় ঘর যাতে অন্ধকার থাকে এবং পরিবেশ যাতে নিস্তব্ধ থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে, অত্যন্ত আলো এবং শব্দের ফলে বারংবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে, যার ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. খাবার:- আপনি রাতে কোন খাবার খাচ্ছেন তার উপরেও ঘুম অনেকাংশে নির্ভর করে। রাতে যে সমস্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় সেই সমস্ত খাবার রাতে না খাওয়াই ভালো। রাতের খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লে ভালো ঘুম হয় না। সুতরাং ভালো ঘুমের জন্য ঘুমোনোর সময়ের অন্ততপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও রাতের খাবার খাওয়ার পর এক গ্লাস গরম দুধে খানিকটা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। দুধের মধ্যে amino acid tryptophan থাকায় শরীরের বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা অত্যন্ত দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও দুধের সাথে মধুর বদলে কলা খেতে পারেন, যা রাত্রে অত্যন্ত দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া ও বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, রাতে ঘুমানোর আগে কিউয়ি ফল খেলে অত্যন্ত দ্রুত ঘুম আসে। এছাড়াও বিজ্ঞানীদের মতামত অনুসারে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে ১ ঘন্টা আগে ভাত খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে পারে। অন্যদিকে যারা ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় জর্জরিত তারা ওটমিল খেতে পারেন, এতেও ভালো ঘুম আসে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে কাঠ বাদাম, আলু, পেস্তা বাদাম, পালংশাক, অ্যাভোকাডো -এর মত খাবারগুলি খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে।
৩. ম্যাসাজ:- সারাদিনের কাজের পর শরীর এবং মন উভয়কেই শান্ত করা প্রয়োজন। প্রতিদিন কাজের শেষে সমগ্র শরীরে ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে একদিকে যেমন শরীরের ব্যথা, বেদনা দূর হয়, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই মনও শান্ত হয়, তার ফলে অত্যন্ত সহজেই ঘুম চলে আসে। তবে প্রত্যেকদিন সমগ্র শরীরের ম্যাসাজ করা সম্ভব না হলে সমগ্র শরীরের পরিবর্তে পায়ের ম্যাসাজ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অলিভ অয়েল কিংবা ইউকেলিপটাস অয়েল ম্যাসাজ করলে রাতে অত্যন্ত দ্রুত ঘুম চলে আসবে।
আরও পড়ুন:- মাধ্যমিক পরীক্ষার পর কি নিয়ে পড়লে কি কি সুবিধা মেলে
৪. ভেষজ চা খাওয়ার অভ্যাস:- চা খান না এমন বাঙালি খুবই কম রয়েছে। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নয়, সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী মানুষরাও সারাদিনে একবার অন্তত চা খেয়ে থাকেন। তবে সাধারণ চায়ের বদলে ভেষজ চা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করলে ঘুমের সমস্যা দূর হবে। ভেষজ চায়ে থাকা ঔষধি গুনাগুন দেহের সমস্ত টক্সিককে বের করে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে দেহ শান্ত হয় এবং রাতে শোয়া মাত্রই ঘুম চলে আসে।
৫. ব্যায়ামে লুকিয়ে রয়েছে ঘুমের সমস্যার সমাধান:- বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে ব্যায়াম করলে একদিকে যেমন শরীর সুস্থ থাকে, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই ব্যায়ামের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করেন তাদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ হরমোনের পরিবর্তনের কারণে রাতে ঘুমানোর সময় অত্যন্ত দ্রুত ঘুম চলে আসে। সুতরাং আপনিও যদি আপনার ঘুমের সমস্যার সমাধান খুঁজে থাকেন তবে প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, যদি তা সম্ভব না হয় তবে নিজের বাড়ির ছাদে হাঁটুন।
৬. বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন:- রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এই সমস্ত যন্ত্রের স্ক্রিন থেকে একপ্রকার নীল রশ্মি বের হয় যা চোখের পক্ষে অত্যন্ত হানিকারক। তবে এই রশ্মি শুধুমাত্র চোখের ক্ষতি করে তা নয়, এই রশির ফলে মানুষের ঘুমও নষ্ট হয়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ ঘাঁটার বদলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রাতে ঘুমানোর আগে বই পড়লে অত্যন্ত দ্রুত ঘুম আসে।
৭. দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন:- বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা দুপুরে ঘুমান তাদেরই রাতে ঘুমোনোর ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি দুপুরে টানা ২ ঘন্টা ঘুমালে রাতে সময়মতো ঘুমানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে ওঠে। সুতরাং রাতে ভালভাবে ঘুমোতে চাইলে দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। দুপুরে ঘুমানোর বদলে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পারেন, যা আপনাকে বিভিন্ন কাজে উৎসাহ যোগাবে এবং রাতের ঘুমেরও কোন ক্ষতি করবে না।