সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের নারী উন্নয়ন থেকে শুরু করে ছাত্রীদের পুনরায় স্কুলমুখী করে তোলার জন্য কার্যকরী প্রকল্পগুলির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকর কন্যাশ্রী প্রকল্প অন্যতম উল্লেখযোগ্য। রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যক ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। আগামী দিনে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র রাজ্যের ছাত্রীদের পুনরায় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আগ্রহী করার পাশাপাশি স্কুলছুট এবং বাল্যবিবাহের মতো অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা।
কন্যাশ্রী প্রকল্প কি?
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মেয়েদের পুনরায় স্কুলমুখী করে স্কুল ছুট এবং বাল্যবিবাহের মতো অভিশাপ দূর করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কন্যাশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যেকোনো ছাত্রীর ১৩ বছর বয়স হলেই তিনি এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন চালাতে পারেন। ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী ছাত্রীরা প্রত্যেক বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বার্ষিক অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীরা ১৮ বছর বয়স হলেই এই প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীরা এককালীন ২৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। শুধু তাই নয় যে সমস্ত ছাত্রীরা স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষালাভ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যও কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ছাত্রীরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন:-
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যেকোনো ছাত্রীর ১৩ বছর বয়স হলেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় উক্ত ছাত্রীর নাম নথিভুক্ত করন সম্ভব। এক্ষেত্রে উক্ত ছাত্রী প্রত্যেক বছরে ১ হাজার টাকার বার্ষিক অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছাত্রীরা এককালীন ২৫,০০০ টাকার আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন যে সমস্ত ছাত্রীরা স্নাতকোত্তর স্তরে আর্টস এবং কমার্স বিভাগে পড়াশোনা করছেন তারা প্রতিমাসে ২০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন এবং সায়েন্স বিভাগের অধীনে পাঠরত ছাত্রীরা প্রত্যেক মাসে ২৫০০ টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন।
তবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের পাশাপাশি কিশোরী কিট প্রদানের মত বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। মূলত বয়ঃসন্ধিকাল চলাকালীন ছাত্রীদের যাতে কোনো রূপ মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে কিশোরী কিট প্রদান করার ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীদের বিশেষভাবে সহায়তা করার জন্য এই কিশোরী কিটে খাদ্যের পুষ্টিগুণ উল্লেখ করা প্ল্যাকার্ড থেকে শুরু করে সহজে পুষ্টিকর খাদ্য বানানোর উপায়, লাভ দড়ির সেট, পেন্সিল বক্স ,অনুপ্রেরণামূলক গল্পের বই, ছাত্রীদের অধিকার সম্পর্কিত হ্যান্ডবুক সহ আরো ১৯ টি সামগ্রীকে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত সামগ্রী ছাত্রীদের বয়সন্ধিকালের বৃদ্ধি এবং বিকাশকে আরো ত্বরান্বিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে প্রশাসনিক ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের তরফে।
আরও পড়ুন:- রাজ্য সরকারের তরফে সমব্যথী প্রকল্প কার্যকর করা হলো, মিলবে ২০০০ টাকার অনুদান।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা কি কি?
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়াটিকে আরো সুবিধাজনক করে তোলার জন্য এই প্রকল্পটিকে মূলত ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর এই তিনটি ভাগ হলো- কে ওয়ান (K1), কে টু (K2) এবং কে থ্রি (K3)।
১. রাজ্য সরকারের আওতাধীন সরকারি কিংবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে পাঠরত যেকোনো ছাত্রীর ১৩ বছর বয়স হলেই উক্ত ছাত্রী কে ওয়ান (K1) প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ছাত্রীরা প্রত্যেক বছরে ১ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
২. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে স্বীকৃত প্রাপ্ত যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছাত্রী কে টু (K2) প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছাত্রী এককালীন ২৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
৩. যে সকল ছাত্রীরা স্নাতক স্তরে ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বর্তমানে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন তারা কে থ্রি (K3) প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। যদিও এক্ষেত্রে ছাত্রীদের বিভাগ অনুসারে প্রতি মাসে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
৪. যে সমস্ত ছাত্রীদের পরিবারের বাৎসরিক আয় ১,২০,০০০ টাকা বা তার তুলনায় কম তারাই কেবলমাত্র কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে।
৫. কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্রীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাবেন কিভাবে?
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ছাত্রী বর্তমানে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত তার কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে নির্ধারিত সময়সীমা অনুসারে স্কুল কর্তৃপক্ষ যোগ্য ছাত্রীদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি দেবেন। এই ফর্মে আবেদনকারী ছাত্রীর নাম, পিতা-মাতা অথবা অভিভাবকের নাম, ছাত্রীর গ্রামের নাম, গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম, ব্লক মিউনিসিপালিটি, পিন কোড, পুলিশ স্টেশন সহ ঠিকানা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য, এছাড়াও বৈধ ফোন নম্বর সহ ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে প্রয়োজনীয় নথিগুলি ফর্মের সঙ্গে যুক্ত করে নির্দিষ্ট দিনে পুনরায় ফর্মটি স্কুলে জমা করার মাধ্যমে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. ছাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র।
২. ছাত্রীর অবিবাহিত হওয়ার প্রমাণপত্র।
৩. আবেদনকারী ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের প্রমাণপত্র।
৪. ছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাস বইয়ের প্রথম পাতার জেরক্স কপি।
৫. জাতিগত শংসাপত্র।
৬. প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।
৭. ছাত্রী বর্তমানে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত তাতে ভর্তির প্রমাণপত্র।