পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যের সাধারণ জনগণের চিকিৎসাক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা করার জন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সমগ্র রাজ্যে সাধারণ জনগণের কাছে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য সাথী কার্ড যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমদিকে শুধুমাত্র দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো গেলেও বর্তমানে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আবেদন জানানোর জন্য এক বিশেষ অ্যাপ কার্যকর করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। তবে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সম্পর্কিত এই অ্যাপের মাধ্যমে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় আবেদন জানানো যায় এমনটা নয়। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করে নিতে পারবেন। আর আজকের এই পোস্টে আমরা রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করতে চলেছি।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কি?
এই প্রকল্পের আওতায় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ প্রত্যেক বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা পেয়ে থাকেন। আর এক্ষেত্রে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল এই স্বাস্থ্যবীমার সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের টাকা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে পরিবারের আকার কিংবা পরিবারের বার্ষিক আয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয় না। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গবাসী যেকোনো সাধারণ মানুষই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পেয়ে যাবেন। ১৮ বছর বয়স হলেই যেকোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতাধীন ব্যাক্তিরা এই প্রকল্পের অধীনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওষুধ, এমনকি পরীক্ষার নিরীক্ষার সুবিধাও পেয়ে থাকেন।
কিভাবে আপনারা বাড়িতে বসেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন:-
১. স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করার জন্য আপনাকে প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী স্বাস্থ্য সাথী অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে।
২. এরপর অ্যাপটি ইনস্টল করে ওপেন করে নিন এবং অ্যাপটির হোম পেজে থাকা URN VERIFICATION নামক অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৩. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে একটি নতুন পেজ আসবে যাতে আপনাকে আপনার জেলা সঠিকভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে এবং URN NUMBER টি নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। উপরোক্ত দুটি তথ্যই সঠিকভাবে প্রদান করা হলে নিচে থাকা SHOW DATA অপশনে ক্লিক করুন।
৪. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে উক্ত স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় যে সমস্ত ব্যক্তির নাম নথিভুক্ত রয়েছে তাদের সমস্ত তথ্য আপনার সামনে চলে আসবে। অর্থাৎ উক্ত স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে কোন কোন ব্যক্তি ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে যেতে পারবেন তা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যই আপনি এই পেজটিতে দেখে নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড স্ট্যাটাস Active রয়েছে কিনা তাও আপনি দেখে নিতে পারবেন।
৫. এরপর আপনাকে পেজটির একেবারে নিচের দিকে থাকা View Balance অপশনে ক্লিক করতে হবে। এই অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনার সামনে আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চলে আসবে। এভাবেই আপনারা বাড়িতে বসে নিজেদের মোবাইলের মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিনিটে আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালান্স দেখে নিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, URN NUMBER টি আপনারা আপনাদের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেই পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের নিচে যে ১৭ ডিজিটের নম্বরটি রয়েছে অর্থাৎ আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের নম্বরটিই আপনার URN NUMBER এবং এর মাধ্যমেই আপনি আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- রাজ্যে পুজোর ছুটি কতদিন? কবে থেকে শুরু হচ্ছে ছুটি? বিস্তারিত জেনে নিন।
স্বাস্থ্য সাথী অ্যাপের মাধ্যমে আর কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
রাজ্য সরকারের তরফে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে স্বাস্থ্য সাথী অ্যাপ কার্যকর করা হয়েছিল। এই অ্যাপের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড সংক্রান্ত নানাবিধ সুবিধা পেয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালেন্স চেক করার পাশাপাশি এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনারা অনলাইনের মারফত স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এখানেই শেষ নয় এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি একাধারে যেমন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কিংবা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে নিতে পারবেন, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতাধীন প্যাকেজগুলি সম্পর্কেও সমস্ত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি জরুরীকালীন অবস্থায় নিজের নিকটবর্তী হাসপাতাল খোঁজা থেকে শুরু করে সেই হাসপাতালে কি ধরনের পরিষেবা প্রদান করা হয় তা সংক্রান্ত সকল প্রকার তথ্য জেনে নিতে পারবেন। সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে আরো জানিয়ে রাখি যে, এই অ্যাপটির মাধ্যমেই আপনারা অফলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মগুলিও পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ যারা অনলাইনের মাধ্যমে ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাও পারদর্শী নন এবং দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে আবেদন জানাতে চান তারা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আবেদন থেকে শুরু করে নাম সংশোধন এমনকি নিজের নাম ডিলিট করার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন পত্র এই অ্যাপের মাধ্যমেই পেয়ে যাবেন।