প্রাকৃতিক উপায়ে ঘন, কালো চুলের অধিকারী হন। এই পদ্ধতি গুলি জেনে নিন।

মহিলা হোক বা পুরুষ ঘন, কালো সুন্দর চুলের স্বপ্ন সকলেরই রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে প্রাত্যহিক জীবনের নানা কাজের মাঝে চুলের যত্ন নেওয়া আর হয়ে ওঠে না, যার কারণে চুল অসম্ভব রুক্ষ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় চুলের যথাযথ যত্ন না নেওয়ার কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে এবং অকালেই চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে এমন কিছু বিশেষ বিষয় রয়েছে যেগুলিকে নজরে রেখে অত্যন্ত সহজেই চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব। চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষভাবে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হলো:-

১. চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই জানতে হবে যে কোন কোন বিষয়গুলি আপনার চুলের ক্ষতি করছে। এক্ষেত্রে সকলের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, রোদ, ধুলো-বালি, ঘাম, বৃষ্টি চুলকে শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে।সুতরাং চুল ভালো রাখার জন্য বাইরে বেরোনোর সময় ছাতা ব্যবহার করুন, প্রয়োজনে স্কার্ফ কিংবা ওড়না জাতীয় কিছু দিয়ে চুল ঢেকে বেরোন। এছাড়াও চুল ভালো রাখতে প্রতিদিন ৩-৪ লিটার জল খান। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল খেলে চুল ঝরা, অনুজ্জ্বল চুলের মত সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।

২. কখনোই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। ভেজা অবস্থায় চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে চুলের গোড়া নরম হয়ে যেতে থাকে, যার ফলে অত্যন্ত সহজেই চুল ঝরতে থাকে। তাই স্বাস্থ্যোজ্বল চুল পাওয়ার জন্য ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো বন্ধ করুন। স্নানের পর চুল শুকিয়ে গেলে বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান, এতে চুল ভালো থাকে এবং চুল পড়ার মতো সমস্যাগুলি দূর হয়।

৩. কেমিক্যাল যুক্ত তেল এবং শ্যাম্পু থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন। কেমিক্যালযুক্ত তেল এবং শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে চুলের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। কেমিক্যাল যুক্ত তেল এবং শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে অকালে চুল ঝরে যাওয়া, টাক পড়া, চুল রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মত সমস্যাগুলি পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং এই সমস্ত সমস্যা দূর করার জন্য আপনার চুলে যথাসম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, যদি তা সম্ভব না হয় তবে হারবাল তেল এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এছাড়াও চুল ভালো রাখার ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিন অন্তর শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রত্যেকদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবে তেলের নিঃসরণ কমে যায়, যা আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং চুল ভালো রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শ্যাম্পু ব্যবহার করাই শ্রেয়।

৪. চুল ভালো রাখার জন্য নানা ধরনের ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যোজ্বল পাওয়ার জন্য আপনি বাড়িতেই নানা ধরনের প্যাক তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। উজ্জল চুল পাওয়ার জন্য শ্যাম্পু করার পর চুলে লেবুর রস ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়াও স্বাস্থ্যোজ্বল চুল পাওয়ার জন্য এক কাপ কন্ডিশনারের সাথে দুই থেকে তিন চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই প্যাকটি দেখে চুল ধুয়ে ধুয়ে ফেলুন, এভাবে বাড়িতে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগানোর মাধ্যমে নরম এবং মসৃণ চুল পেতে পারেন।

৫. চুল ভালো রাখার জন্য ডিম ব্যবহার করতে পারেন। চুল ভালো রাখার জন্য একটি গোটা ডিম ফাটিয়ে ২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, এতে আপনার চুলের রুক্ষতা দূর হবে। এছাড়াও চুলের শুষ্কতা দূর করার জন্য অ্যাপেল, সিডার, ভিনিগারও ব্যবহার করতে পারেন।

আরও পড়ুন:- UPSC এর জন্য প্রস্তুতি নেবেন কোন নিয়মে, জেনে নিন।

৬. চুল ভালো রাখার জন্য প্রত্যেকদিন অবশ্যই ঠান্ডা জলে স্নান করুন। উষ্ণ জলে কখনোই চুল ধোবেন না। উষ্ণ জলে চুল ধুলে চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং চুল ভালো রাখতে অবশ্যই প্রত্যেকদিন ঠান্ডা জলে স্নান করুন।

৭. চুলের ভালো রাখার জন্য আপনাকে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ডায়েট ফলো করতে হবে। এক্ষেত্রে চুল ভালো রাখার জন্য আপনার ডায়েটে রাজমা রাখতে পারেন। রাজমায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা আপনার চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রাজমায় থাকা ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং প্রোটিনের মতো পুষ্টিযুক্ত উপাদানগুলি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। এছাড়াও চুল ভালো রাখতে প্রত্যেকদিন বাদাম খেতে পারেন।

৮. মজবুত চুল পাওয়ার জন্য আপনার প্রত্যেক দিনের ডায়েটে অবশ্যই কিছু সবুজ শাকসবজি রাখুন। এছাড়াও প্রত্যেক দিনের খাবারে কিছু পরিমাণ ফল রাখুন যা আপনার চুলকে শক্ত এবং মজবুত করে তুলবে। এক্ষেত্রে পালং শাক, বিটরুট, বেরি খাওয়া চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৯. রোদ এবং দূষণে চুল ভীষণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তবে চুল ভালো রাখতে এবং রোদ ও দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব দূর করতে চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেলে থাকা বিভিন্ন উপাদান চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য এবং স্ক্যাল্প ভালো রাখতে সহায়তা করে। সুতরাং চুল ভালো রাখার জন্য আপনিও প্রতিনিয়ত চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।

১০. ঘন এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য পেঁয়াজ একটি অত্যন্ত উপকারী বস্তু। আপনার চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পেঁয়াজের তেল তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। এছাড়াও পেঁয়াজ দিয়ে হেয়ার মাক্স তৈরি করে চুলে লাগালে ঘন এবং কালো চুল পাবেন। যারা পেঁয়াজের তেল এবং প্যাক তৈরি করার মত সময় পান না, ঘন এবং কালো চুল পাওয়ার জন্য তারা পেঁয়াজের রস খেতে পারেন।

Leave a Comment