করোনা মহামারীর পরে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণে সমগ্র ভারত জুড়ে ক্রমাগত হারে মূল্যবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। দেশজুড়ে বাড়তে থাকা এই মূল্যবৃদ্ধি থেকে সমগ্র ভারতে সাধারণ মানুষকে রক্ষার খাতিরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নানাবিধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির এই আগুনকে পৌঁছেছে ভারতের সাধারণ মানুষের রান্নাঘরেও। আর তাতেই সাধারণ মানুষকে খানিকটা হলেও স্বস্তি দিতে এবং এলপিজি -এর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে প্রতিটি এলপিজি গ্যাসের জন্য ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ভারতের জনসংখ্যা অনুসারে যে পরিমাণ এলপিজি গ্যাসের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ৬০ শতাংশেরও বেশি ভারত বিদেশ থেকে আমদানি করে। যার কারণে ভারতে এলপিজি -এর মূল্যবৃদ্ধি কিংবা মূল্যহ্রাস সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত। এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যুক্ত হওয়ায় প্রত্যক্ষভাবে এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো প্রায় অসম্ভব, যার জেরে ভারতের জনসাধারণকে সাময়িক স্বস্তি প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিশেষ ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য বাড়িতে রান্নার জন্য ব্যবহৃত ১৪.২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বছরে ১২ টি সিলিন্ডারের জন্য ২০০ টাকা করে ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ভর্তুকি সরাসরি দেশের সাধারণ জনগণের ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে।
যদিও ইতিপূর্বে বহু ভারতীয় নাগরিকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে, তারা এলপিজি সিলিন্ডারের ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য হলেও ভর্তুকি পাচ্ছেন না। আর তাতেই বিগত সোমবার সাধারণ জনগণের ব্যাংক একাউন্টে LPG সিলিন্ডারের ভর্তুকি পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকার প্রশ্নের উত্তর দিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, এই দিনের এই বৈঠকে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের নাম নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর এই প্রশ্নগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হল, মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমানো হলেও সমগ্র ভারতজুড়ে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমানো হচ্ছে না কেন?
আরও পড়ুন:- ইলিশ প্রেমীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুখবর, বাজারে এল ১০ হাজার টন ইলিশ।
আর এই প্রশ্নের উত্তরে হরদীপ পুরি সিং জানিয়েছেন যে, তেল বিপপণকারী সংস্থাগুলি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সৌদি আরবের প্রোপেনের দামের কারণে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেনের দাম থেকেই এলপিজির বেঞ্চমার্ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, আর বিগত ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেনের মূল্য ৪১৫ ডলার থেকে বেরিয়ে ৭১২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে সমগ্র ভারতব্যাপী এলপিজি -এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চেন্নাইতে এলপিজি গ্যাসের মূল্য ছিল ১০৬৮ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু পরে তা বেড়ে ১১১৮ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত চেন্নাই জুড়ে এলপিজির এই দামই বহাল রয়েছে। অন্যদিকে দেশের রাজধানী দিল্লিতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১১০৩ টাকা। আর দেশব্যাপী চলতে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির মূল্যবৃদ্ধি সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তা বাড়াচ্ছে বই কমাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রত্যেক গ্যাস পিছু ২০০ টাকার ভর্তুকি প্রদান করা হলে এই ভর্তুকির মাধ্যমে সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে দরিদ্র জনসাধারণের জন্য যথেষ্ট উপকৃত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে অর্থনৈতিক মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের তরফে।