ভারতজুড়ে ক্রমাগত হারে বাড়তে থাকা মূল্যবৃদ্ধির আবহে সমগ্র ভারতের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন স্কিমে সঞ্চয়ের মাধ্যমে এই মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইছেন। কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার পূর্বে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যায়। আর তাই ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য এমন বেশ কিছু সঞ্চয় প্রকল্প লঞ্চ করা হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে সমগ্র ভারতের সাধারণ মানুষ কোনরকম ঝুঁকি ছাড়াই সুদ সহ রিটার্ন ফেরত পেয়ে যাবেন। আর পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী এমনই একটি বিশেষ স্কিম হল পোস্ট অফিস পাবলিক প্রভিডেন্স ফান্ড স্কিম বা পোস্ট অফিস PPF স্কিম। তবে যেকোন স্কিমে বিনিয়োগের পূর্বে ওই স্কিম সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা পোস্ট অফিস পিপিএফ স্কিম সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
পোস্ট অফিস স্কিম সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-
১. কারা এই স্কিমের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
ভারতে বসবাসকারী যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই এই স্কিমের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। অর্থাৎ আপনিও যদি ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী হয়ে থাকেন, তবে আপনিও এই স্কিমের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। কোনো NRI ব্যক্তি এই স্কিমের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না। এর পাশাপাশি ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে প্রকাশিত তথ্য আরও জানানো হয়েছে যে, ভারতে বসবাসকারী যেকোনো মাইনার বালক অথবা বালিকার জন্য তার পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবক এই স্কিমের আওতায় অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবেন। ভারতীয় জনগণের সুবিধার্থে আরও জানিয়ে রাখি যে, পোস্ট অফিস স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তির নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট ওপেন করা সম্ভব নয়। সমগ্র ভারতের যেকোনো পোস্ট অফিসে একজন ব্যক্তির নামে একটিমাত্র অ্যাকাউন্ট ওপেন করা যাবে। পোস্ট অফিসের অন্যান্য স্ক্রিনের মত এই স্ক্রিনের আওতায় জয়েন্ট একাউন্ট এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।
২. পোস্ট অফিস স্কিমের আওতায় কত শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়ে থাকে?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, ১ লা এপ্রিল ২০২৩ তারিখ থেকে এই স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তির ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পেয়ে যাবেন। সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, এই স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তিরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পেয়ে থাকেন।
৩. এই স্কিমের অধীনে কত টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব?
পোস্ট অফিসের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, নূনতম ৫০০ টাকার বিনিময়ে এই স্কিমের আওতায় একাউন্ট খোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ১ বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- পড়া ভুলে যাচ্ছেন? জেনে নিন স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর ১০ টি সেরা উপায়
৪. কত বছরের জন্য পোস্ট অফিস PPF স্কিমে বিনিয়োগ করা সম্ভব?
নূন্যতম ১৫ বছরের জন্য এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করা অবশ্য প্রয়োজনীয়। তবে এক্ষেত্রে পিপিএফ এর ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড ফুরানোর পর একজন ব্যক্তি ন্যূনতম পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনরায় এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করতে পারবেন পোস্ট অফিস পিপিএফ স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তিরা এর পাশাপাশি ডাক বিভাগের তরফে প্রকাশিত তথ্যের আরও জানানো হয়েছে যে পোস্ট অফিস পিপিএফ এর সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি যদি এই স্কিমের ম্যাচুরিটি পিরিয়ড শেষ হবার পূর্বেই মারা যান তবে উক্ত ব্যক্তির একাউন্ট ক্লোজ করে দেওয়া হবে এবং তার নমিনি কোনভাবেই এই অ্যাকাউন্টের অধীনে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন না।
৫. এই স্কিমের আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
পোস্ট অফিস স্কিমের আওতায় ৭.১% সুদের পাশাপাশি লোন নেওয়ার সুবিধাও পাওয়া যাবে। স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তিরা স্কিমে বিনিয়োগের ১ বছর পর থেকেই লোন নেওয়ার সুবিধা পেয়ে যাবেন। একটি আর্থিক বছরে কেবলমাত্র একটিমাত্র ঋণই নেওয়া যাবে। অর্থাৎ ১ বছরে আপনি কেবলমাত্র একবারই ঋণ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রথম লোন না শোধ করা পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তিকে দ্বিতীয় লোনের সুবিধা প্রদান করা হবে না। এর পাশাপাশি এই স্কিমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আরো এক সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর তা হল, পোস্ট অফিস পিপিএফ -এর আওতাধীন ব্যক্তিরা ৮০ সি ধারায় ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ছাড় পেয়ে থাকেন।
পোস্ট অফিস পিপিএফ স্কিন থেকে কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে?
আপনি যদি প্রতিদিন এই স্কিমের আওতায় ৫০ টাকা করে বিনিয়োগ করেন। তবে প্রত্যেক মাসে গড়ে আপনি ১৫০০ টাকা করে জমা করবেন। আপনি যদি ১৫০০ টাকা করে ১৫ বছরের জন্য প্রত্যেক মাসে জমা করেন তবে আপনি আপনার পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ২,৭৩,৭৫০ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ৭.১ শতাংশ সুদের হারে আপনি ২,২১,২১৫ টাকা সুদ পেয়ে যাবেন এবং ১৫ বছরের শেষে আপনি সুদে-আসলে ৪,৯৪,৯৬৫ টাকা পেয়ে যাবেন অর্থাৎ এই ১৫ বছরে আপনি বাড়িতে বসেই দু লক্ষ টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
অন্যদিকে আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ টাকা করে বিনিয়োগ করেন তবে আপনি প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা এবং প্রত্যেক বছরে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করবেন। ১৫ বছর ধরে বিনিয়োগের ফলে আপনার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫,৪৭,৫০০ টাকায় এবং এই ১৫ বছর শেষে আপনি সুদে আসলে মোট ৯,৮৯,৯৩১ টাকা পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ পোস্ট অফিস পিপিএফ স্কিমের মাধ্যমে আপনি বাড়িতে বসেই ৪,৪২,৪৩১ টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে পিপিএফ বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিমের আওতায় আপনি শুধুমাত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারবেন এমনটা নয় আপনি অন্য যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে এই স্কিমের অধীনে জানাতে পারবেন। সুতরাং আপনিও যদি নিজের এবং নিজের পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিনিয়োগ করতে চান তবে পোস্ট অফিস পাবলিক প্রোফিডেন্ট ফান্ড স্কিম আপনার জন্য একেবারে পারফেক্ট।