করোনা মহামারী এবং তার পরবর্তী সময়ের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণ বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয় প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যদিও অধিকাংশ মানুষই যে সমস্ত সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে কোনোরকম ঝুঁকি ছাড়াই নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব সেই সমস্ত প্রকল্পেই বিনিয়োগ করে থাকেন। সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় পোস্ট অফিসের তরফে এমন বেশ কিছু স্কিম লঞ্চ করা হয়েছে যে সমস্ত স্কিমে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণ ঝুঁকিমুক্তভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং স্কিমের মেয়াদ ফুরোলে সুদসহ সম্পূর্ণ টাকাও ফেরত পেয়ে যাবেন। আর আজকের এই পোস্টে আমরা পোস্ট অফিসের এমন বিশেষ কতগুলি স্কিম সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি যেগুলির অধীনে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনারা যথেষ্ট অর্থ ফেরত পেয়ে যাবেন।
কিষাণ বিকাশ পত্র:-
ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকরী সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি সঞ্চয় প্রকল্প হল কিষাণ বিকাশ পত্র। ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ভারতে বসবাসকারী ১৮ বছর কিংবা তার তুলনায় বেশি বয়সী যেকোনো সাধারণ জনগণই এই স্কিমের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকরা তাদের সুবিধা অনুসারে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট কিংবা জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন। অন্যদিকে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার খাতিরে যে সমস্ত পিতা-মাতা নিজেদের সন্তানের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে চান তাদের কথা মাথায় রেখে এই স্কিমের আওতায় ১০ বছরের বেশি বয়সী শিশুর নাম নথিভূক্ত করণের ক্ষেত্রেও সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। পোস্ট অফিসের আওতাধীন এই স্কিমের অধীনে সাধারণ জনগণ ৭.৭ শতাংশ হারে সুদ পেয়ে থাকেন। ন্যূনতম ১,০০০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি এই স্কিমের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন, যদিও এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমানতের কোনো উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নাগরিকদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, এই স্কিমের অধীনে ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থের দ্বিগুণ অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা:-
সমগ্র ভারতব্যাপী নারী উন্নয়নের খাতিরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। কন্যা সন্তান জন্মের পর যেকোনো ভারতীয় নাগরিক তার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের নামে এই প্রকল্পের আওতায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, যদিও সরকারের তরফে নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে এই প্রকল্পের আওতায় শুধুমাত্র ১০ বছরের চেয়ে কম বয়সী কন্যা সন্তানের অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব। এই প্রকল্পের অধীনে ৭.৬ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অধীনে একজন ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলেই এই স্কিমে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
টাইম ডিপোজিট স্কিম:-
সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী আরও একটি বিশেষ স্কিম হল টাইম ডিপোজিট স্কিম। পোষ্ট অফিসের তরফে জারি করা নির্দেশ অনুসারে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো নাগরিক এই স্কিমের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। পোস্ট অফিসের টাইম ডিপোজিট স্কিমের আওতার ৭.৫ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে এই স্কিমের অধীনে ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর কিংবা ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়াও নাগরিকরা এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগের সময়সীমা ১০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট:-
পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী আরো একটি উল্লেখযোগ্য সঞ্চয় প্রকল্প হলো ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট। এই স্কিমের অধীনে ৭.৭ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটের অধীনে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব।
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম:-
সমগ্র ভারতের বয়স্ক নাগরিকদের সুবিধার খাতিরে কার্যকরী এক উল্লেখযোগ্য স্কিম হল সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম। মূলত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকরাই এই স্কিমের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এই স্কিমের অধীনে ৮.২ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।
রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট:-
পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট -এর অধীনে বিনিয়োগ করেও আপনি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি সিঙ্গেল কিংবা জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই ৬.২০ শতাংশ হারের সুদ পাওয়া যায়। এই স্কিমের অধীনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে।