সুস্থ থাকতে চান? জানুন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা। রোগকে বলুন টাটা।!

সভ্যতা যত এগিয়েছে মোবাইল, টেলিভিশন, ট্যাব, কম্পিউটারের মতো যন্ত্রগুলি ততোধিক দ্রুততার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময় ইন্টারনেট সহ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম -এর মতো অ্যাপগুলি প্রতিটা সময়ে সাধারণ মানুষকে ব্যস্ত রেখেছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই কাজের চাপ এতটাই বেশি যে সারাদিনের কাজ শেষ করে বিছানায় পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যায়, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই সকালে উঠতে দেরি হয়ে যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন সকালে ঘুম থেকে উঠলে বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন প্রকার গবেষণার ফলস্বরূপ জানা গিয়েছে যে, প্রতিনিয়ত নিয়ম করে সকালে উঠলে যেকোনো ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি ঠিক যেমনভাবে কমে যায়, ঠিক তেমনভাবেই মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিও কমে যায়। ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে, এমনকি সকালে উঠলে কি কি সুফল পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে চর্চারও অন্ত নেই। যার জেরে সকালে উঠলে কি কি সুফল পাওয়া যেতে পারে তা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করতে চলেছি।

সকালে ওঠার সুফল সম্পর্কে জেনে নিন:-

১. বিশুদ্ধ বাতাস এবং যোগাসন:- সকালবেলা উঠলে বেশ খানিকটা সময় পাওয়া যায় ,আর সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে যোগাসন যোগ ব্যায়াম সহ বিভিন্ন প্রকার শরীর চর্চায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন সকালবেলা প্রচুর মানুষ হাঁটা, দৌড়ানো, ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকেন, যা তাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, সকালবেলা উঠলে বেশ খানিকটা সময় পর্যন্ত দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়, যা আপনার শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

২. কর্মব্যস্ততা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি:- সকালবেলা উঠলে বেশ খানিকটা ফাঁকা সময় হাতে পাওয়া যায়, যার ফলে সারাদিনের কাজের বেশ কিছুটা কাজ সকালেই শেষ করে রাখা যায়। অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যক্তিদের সারাদিন যথেষ্ট পরিমাণ কাজ থাকে তারা সকালে তাড়াতাড়ি উঠে বেশ খানিকটা কাজ শেষ করে রাখলেই সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। আর কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেলেই মানসিক চাপ থেকেও মুক্তি মেলে। অর্থাৎ সকালে ওঠার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে যে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা সকালে ওঠেন তাদের মানসিক চাপ এমনিতেই খানিকটা কম থাকে। সুতরাং সকালে উঠলে একদিকে যেমন যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা যায় অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই সারাদিনের কাজের চাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

৩. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি:- বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠেন তাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অন্যান্য ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতার তুলনায় যথেষ্ট বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ভুলে যাওয়া কিংবা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে না রাখতে পারার মত সমস্যাগুলি দূর হয়। একটি বিশেষ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসমস্ত ব্যক্তিরা অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তারা অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় যথেষ্ট সক্রিয় থাকেন।

আরও পড়ুন:- ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিক্ষার হার কত? বিস্তারিত জানুন প্রতিবেদনে।

৪. পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠা:- বৈজ্ঞানিকদের মত অনুসারে, সকালে উঠে পড়াশোনা করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং যে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করছেন সেটিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত মনে থাকে। অর্থাৎ যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তারা পড়াশোনায় বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠতে পারেন। এমনকি আরও এক গবেষণা মারফত জানা গিয়েছে যে, যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন তাদের পরীক্ষার ফল অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি ভালো হয়ে থাকে।

৫. দীর্ঘায়ু জীবনলাভ:- বিভিন্ন গবেষণা জানা গিয়েছে যে, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে মানুষের আয়ু বাড়ে। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা জানা গিয়েছে যে সমস্ত মানুষ সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেন, দেরিতে ওঠা ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা অন্ততপক্ষে ১০ শতাংশ কমে যায়। সুতরাং সকালে ঘুম থেকে ওঠা যেমনভাবে আপনার শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, অন্যদিকে এই সকালে ওঠা আপনাকে দীর্ঘ জীবনলাভ করতেও সাহায্য করে থাকে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ:- ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সকালে ওঠা বেশ ফলপ্রদায়ী। সকালে ওঠার জন্য রাতের বেলা যথেষ্ট তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হয়, আর তা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গবেষণার ফলে দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠে পড়েন তারা খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। অন্যদিকে সকালে উঠে হাঁটা, দৌড়ানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের শরীর চর্চা, ফুটবল, ক্রিকেট, হকির মত বিভিন্ন প্রকার খেলায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমেও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও সকালে উঠলে বিশেষ পজিটিভ এনার্জি পাওয়া যায়, যা সারাদিনের কাজে শক্তি যোগায়।

সুতরাং, উপরোক্ত বিষয়গুলিকে নজরে রেখে বলা যায় যে সকালে ওঠার মধ্যে আখেরে আপনারই লাভ লুকিয়ে রয়েছে। বহু বছর আগেও সমগ্র ভারতের প্রচুর সংখ্যক মানুষ সকালে উঠে ভগবানের নাম, সংকীর্তণ, জপ-তপ, ধ্যান থেকে শুরু করে নানাবিধ যোগ ব্যায়াম এবং শরীরচর্চায় ব্যস্ত থাকতেন। তবে বর্তমানে মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগে শরীরচর্চা, ফিট থাকা, যোগব্যায়াম তাদের জায়গা হারিয়েছে, তার বদলে মানুষ ইন্টারনেট, মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে পাবজি, ফ্রী ফায়ার -এর মত গেম এবং ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলির প্রতি বেশি পরিমাণে ঝুঁকেছে। আর এতে একদিকে যেমন মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, অন্যদিকে মানুষের সমস্ত রকম সুঅভ্যাস বদলে যাচ্ছে। ফলত, মানুষের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি কাজের ক্ষেত্রেও অনীহাও দেখা যাচ্ছে। সুতরাং আপনিও যদি এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান, তবে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান এবং সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন।

Leave a Comment