ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিক্ষার হার কত? বিস্তারিত জেনে নিন।

বিভিন্ন দেশের যেকোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার মূল মাধ্যম হল শিক্ষা এবং সংস্কৃতি। যেকোনো দেশের উন্নতি নির্ভর করছে সেই দেশের সাধারণ মানুষের শিক্ষার হারের উপরে। এমনকি বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, সংস্কৃতি সহ যেকোনো ক্ষেত্রেই কোনো দেশ কতটা উন্নতি করবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে উক্ত দেশের সাধারণ জনগণের শিক্ষার উপরে। স্বাধীনতার পর থেকে স্বাক্ষরতার হারে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্য সরকারের তরফে গৃহীত নানাবিধ প্রকল্প, স্কিম এবং যোজনার মাধ্যমে সমগ্র দেশজুড়ে শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি এখানেই শেষ নয়, ভারতের সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য সংবিধানের বিভিন্ন ধারাতেও নানা ধরনের আইন এবং নির্দেশের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। এইসকল আইন এবং প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশের প্রচুর সংখ্যক মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে, এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করা গিয়েছে। সুতরাং সমগ্র দেশের বহু সংখ্যক মানুষ বিভিন্নভাবে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হলেও বিভিন্ন রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিন্নতা এবং প্রাকৃতিক দুর্গমতার কারণে শিক্ষার হারে পার্থক্য দেখা যায়। আর আজকের এই পোস্টে আমরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার হার নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

আদমশুমারির ফলে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে কেরলে শিক্ষার হার সর্বাধিক। এই রাজ্যটিতে মোট শিক্ষার হার ৯৪ শতাংশ, যার মধ্যে ৯৬.১১ শতাংশ পুরুষ এবং ৯২.০৭ শতাংশ মহিলা রয়েছে।

শিক্ষার হারের নিরীক্ষা কোন কোন রাজ্যগুলি প্রথম দশে রয়েছে?

১. ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে শিক্ষার হারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে লাক্ষাদ্বীপ। লাক্ষাদ্বীপের মোট শিক্ষার হার ৯১.৮৫ শতাংশ। যদিও এক্ষেত্রে পুরুষদের শিক্ষার হার ৯৫.৫৬ শতাংশ এবং মহিলাদের শিক্ষার হার ৮৭.৯৫ শতাংশ।

২. লাক্ষাদ্বীপের পরই সমগ্র দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে শিক্ষার হারে এগিয়ে রয়েছে মিজোরাম। মিজোরামের মোট শিক্ষার হার ৯১.৩৩ শতাংশ। আদমশুমারি অনুসারে, মিজোরামের ৯৩.৩৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৮৯.২৭ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।

৩. শিক্ষার হারে সমগ্র দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে গোয়া। গোয়ার মোট শিক্ষার হার ৮৮.৭ শতাংশ, যদিও এক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৯২.৬৫ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৪.৬৬ শতাংশ।

৪. আদমশুমারি অনুসারে, সমগ্র ত্রিপুরার ৮৭.২২ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। এক্ষেত্রে ৯১.৫৩ শতাংশ পুরুষ শিক্ষিত এবং ৮২.৭৩ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।


৫. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ত্রিপুরার পরই শিক্ষার হারের তালিকায় নাম রয়েছে দমন ও দিউ -এর। দমন ও দিউ -এর মোট শিক্ষার হার ৮৭.১ শতাংশ, যার মধ্যে ৯১.৫৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৭৯.৫৫ শতাংশ মহিলা।

৬. আদমশুমারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মোট জনসংখ্যার ৮৬.৬৩ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। এক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৯০.২৭ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার ৮২.৪৩ শতাংশ।

৭. স্বাক্ষরতার হারের তালিকায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পরই আসে রাজধানী দিল্লির নাম। আদমশুমারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সমগ্র দিল্লীর মোট জনসংখ্যার ৮৬.২১ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। এক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৯০.৯৪ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৮০.৭৬ শতাংশ।

৮. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, চন্ডিগড়ের মোট শিক্ষার হার ৮৬.০৫ শতাংশ, এর মধ্যে ৮৯.৯৯ শতাংশ পুরুষ শিক্ষিত এবং ৮১.১৯ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।

৯. শিক্ষার হারের নিরিখে সমগ্র দেশের মধ্যে দশম স্থানে রয়েছে পুদুচেরি। পুদুচেরির মোট শিক্ষার হার ৮৫.৮৫ শতাংশ, যার মধ্যে ৯১.২৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৮০.৬৭ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।

আরও পড়ুন:- মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল স্কলারশিপে আবেদন করে পেয়ে যান ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান। আবেদন পদ্ধতি জানুন।

ভারতের কোন রাজ্যে সর্বনিম্ন শিক্ষার হার রয়েছে?

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, সমগ্র ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারে শিক্ষার হার সবথেকে কম। বিহারের মোট সাক্ষরতার হার ৬১.৮ শতাংশ।

কোন কোন রাজ্যগুলি শিক্ষার হারের নিরিখে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে?

আদমশুমারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, শিক্ষার হারের দিক থেকে বিহারের পরেই অরুণাচল প্রদেশের নাম রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের মোট শিক্ষার হার ৬৫.৩ শতাংশ। অরুণাচল প্রদেশের পরেই রয়েছে রাজস্থানের নাম, এক্ষেত্রে রাজস্থানের মোট জনসংখ্যার ৬৬.১ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। তবে শুধুমাত্র বিহার, অরুণাচল প্রদেশ কিংবা রাজস্থান নয় শিক্ষার হারের দিক থেকে দেখতে গেলে ঝাড়খন্ড যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সমগ্র ঝাড়খণ্ডের শিক্ষার হার ৬৬.৪১ শতাংশ।

শিক্ষার হারের নিরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ কত তম স্থানে?

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, সারা ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে শিক্ষার হারের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ১৯ তম স্থানে রয়েছে। এই রিপোর্ট অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের মোট সাক্ষরতার হার ৭৬.২৬ শতাংশ, যার মধ্যে ৮১.৬৯ শতাংশ পুরুষ শিক্ষিত এবং ৭০.৫৪ শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।

ভারতের অন্যান্য রাজ্য গুলি কত তম স্থানে রয়েছে?

আদমশুমারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, হরিয়ানার মত ভারতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রাজ্যগুলিও শিক্ষার হারের নিরিখে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত তালিকা অনুসারে শিক্ষার হারের তালিকায় গুজরাট ১৭ তম স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে সাক্ষরতার দিক থেকে পাঞ্জাব হরিয়ানা এবং কর্ণাটক যথাক্রমে ২১, ২২ এবং ২৩ নম্বর স্থানে রয়েছে। এছাড়াও আদমশুমারি অনুসারে সাক্ষরতার হারের তালিকায় উত্তরপ্রদেশ ২৯ তম স্থানে এবং মধ্যপ্রদেশ ২৮ তম স্থানে রয়েছে।

Leave a Comment