পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে নেওয়া হবে কি হবে না তা নিয়ে বিগত কিছুদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক এবং জল্পনার সৃষ্টি হচ্ছিল। আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ্যে আসার ঠিক পরেই সমস্ত জল্পনার ইতি ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের নির্দেশে শিক্ষা দপ্তরের তরফে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে এক বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আনা হল। কবে থেকে এই নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর হবে, নতুন শিক্ষানীতির ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি পরিবর্তন আনা হবে তা জানতে রীতিমতো উৎসুক হয়ে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা। আর রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে।
কি কি পরিবর্তন আনা হতে চলেছে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায়?
পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুসারে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করতে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের। তবে এবারে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে ৩ বছরের গ্রাজুয়েশনের বদলে ৪ বছরের গ্রাজুয়েশনের প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দেওয়া হলো রাজ্য সরকারের তরফে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সরকারি কলেজ এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে এই ৪ বছরের স্নাতক স্তরের নিয়ম কার্যকর করা হবে, এমনটাই জানানো হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায়। অর্থাৎ চলতি বছরে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে আগামী দিনে খুব শীঘ্রই বিভিন্ন সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে চলেছেন তারা শিক্ষা দপ্তরের নতুন নিয়ম মেনে ৪ বছরে গ্রাজুয়েশনের অধীনে নিজেদের শিক্ষা সম্পন্ন করবেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা বাড়িয়ে ৪ বছর করার পাশাপাশি মাস্টার্স কোর্সের সময়সীমা কমিয়ে ১ বছর করা হবে। তবে রাজ্য সরকারের এই নতুন শিক্ষা নীতির ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক স্তরের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ একটি সুযোগ পেতে চলেছেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, এবার থেকে স্নাতক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগও পাবেন, এমনটাই জানানো হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে জারি করা নির্দেশিকায়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে যে, নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর হওয়ার ফলে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে জাতীয় শিক্ষা নীতি নানা ধরনের নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে। এমনকি শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে জাতীয় শিক্ষা নীতির নির্দেশ অনুসারে ক্রেডিট বেসড সিস্টেম প্রয়োগ করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনটাই দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত খবরে।
শিক্ষা নীতিতে এই রূপ বদল আনা হলো কেন?
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মহাশয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সমগ্র রাজ্যের প্রায় ৭ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে চলেছেন, এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে কোনভাবেই সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলিতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে এই নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর করা হয়েছে। চার বছরের গ্র্যাজুয়েশনের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে অধিকতর সুবিধা পাবেন, ঠিক তেমনভাবেই গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর বাইরে পড়তে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন আলো স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান বার্ষিক ৭২০০ টাকা
চার বছরের স্নাতক স্তরের পাঠক্রম কি হতে চলেছে?
নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর হওয়ার ফলে গ্র্যাজুয়েশনের পাঠক্রমে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে বলেই মনে করছেন শিক্ষা মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। আর স্নাতক স্তরের পাঠক্রম থেকে শুরু করে পাঠ্যসূচি এবং চার বছরের স্নাতক স্তরের কোর্সের রূপরেখায় কি কি পরিবর্তন আনা যায় তা নির্ধারণ করার জন্য ৬ সদস্যের এক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির নির্দেশ অনুসারেই পরবর্তীতে ৪ বছরে স্নাতক স্তরের কোর্সগুলির চূড়ান্ত রূপরেখা স্থির করা হবে বলেই জানা গিয়েছে। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ৪ বছরের স্নাতক স্তরের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব কিনা তা জানতেও উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর।
কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া কবে থেকে শুরু হতে চলেছে?
জাতীয় শিক্ষা নীতির নিয়ম অনুসারে এবারে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বারংবার প্রকাশ্যে আসলেও বিগত বছরের মতোই কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই স্নাতক স্তরে কোর্সগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ১ লা জুলাই তারিখ থেকে রাজ্যের সমস্ত কলেজগুলির অধীনে ভর্তির প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই সমস্ত ভর্তির প্রক্রিয়া কার্যকর থাকবে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফে আরো জানানো হয়েছে যে, শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হবে। আর প্রতিটি কলেজের মেধা তালিকা প্রকাশ করার নির্ধারিত দিনটি হল ২০ শে জুলাই। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে আরো জানানো হয়েছে যে, ৩১শে জুলাই তারিখের মধ্যে সমগ্র রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে এবং ১ লা আগস্ট তারিখ থেকে রাজ্যের সমস্ত কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে হবে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসায় যথেষ্ট খুশি হয়েছেন সমগ্র রাজ্যের শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকেরা। ইতিপূর্বে বারংবার দেখা গিয়েছে যে, বিভিন্ন কলেজের ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য আবেদনের সময়সীমা আলাদা হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যার শিকার হতে হয়েছে। আর তাই ছাত্র-ছাত্রীদের এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে স্নাতক স্তরে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ের সময়সীমা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকের মতে, কলেজগুলির গাফিলতির কারণে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে না হতে ফার্স্ট সেমিস্টার এসে পড়ে যার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবারে যাতে এই রূপ কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কলেজের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলির পাশাপাশি কবে থেকে ক্লাস শুরু করা হবে তারও সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে বারংবার নানা ধরনের সমালোচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে জাতীয় শিক্ষা নীতির নিয়ম অনুসারে ৪ বছরের স্নাতক স্তরের কার্যক্রম চালু করা হলে এই বিষয়টি নিয়ে বারংবার নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার সহ শিক্ষা দপ্তরকে। আর তাই রাজ্য সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে সমগ্র রাজ্যের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষা নীতি সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া হয়নি রাজ্য সরকারের তরফে। জাতীয় শিক্ষা নীতির সমস্ত ভালো বিষয়গুলিকে নজরে রেখে এক নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্য সরকার। রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই শিক্ষা দপ্তর এবং রাজ্য সরকারের এই নতুন নিয়ম কার্যকর করা। শুধুমাত্র রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর করার পাশাপাশি স্নাতক স্তরের ভর্তির বিষয়গুলি নিয়েও যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে। আর এই সমস্ত পদক্ষেপের কারণেই রাজ্য সরকারের নতুন শিক্ষা নীতি এবং কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়মগুলি যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ এবং রাজ্যের শিক্ষা মহলের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে।