কি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে কোন স্তরে শিক্ষকতা করতে পারবেন? বিস্তারিত জেনে নিন।

ডাক্তারি হোক বা ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা শিক্ষকতা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান, আর তাই নিজের চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই নিজস্ব কিছু স্বপ্ন রয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান। তবে শিক্ষক হবার স্বপ্ন পূরণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের রাজ্য সরকারের তরফে নির্ধারিত কতগুলি যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। যার জেরে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে গেলে কি কি যোগ্যতা আবশ্যক তাই আজকের এই পোষ্টের মূল বিষয়বস্তু হতে চলেছে।

শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন হয়ে থাকে?

ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, আর্টস হোক বা কমার্স কিংবা সাইন্স এই তিনটি বিভাগের যেকোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলেই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব, এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী শিক্ষকতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন। অন্যদিকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করার মাধ্যমেও একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তবে শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর হোক বা স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর, একজন ছাত্র অথবা ছাত্রীকে D.El.Ed. এবং B.Ed. এই কোর্স দুটির মধ্যে একটি কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তবে একটি প্রশ্ন রয়েই যায় যে কোন ক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা আবশ্যক।

আর এই প্রশ্নের উত্তরে চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলগুলির শিক্ষকদের মূলত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে, আর এই চারটি শ্রেণি হল:-

১. প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক।
২. আপার প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক।
৩. নর্মাল সেকশন স্কুল টিচার।
৪. হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল শিক্ষক।

১. প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা:- যে সমস্ত শিক্ষকর রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষকতা করে থাকেন অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করে থাকেন তাদের প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক বলা হয়ে থাকে। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে একজন ছাত্র অথবা ছাত্রীকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং D.El.Ed. কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে, তবেই সমগ্র রাজ্যজুড়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে TET পরীক্ষা হয়ে থাকে তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যাবে। TET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ উত্তীর্ণ হতে হবে। আর এই দুটি স্তর সসম্মানে উত্তীর্ণ হতে পারলেই যেকোনো চাকরিপ্রার্থী প্রাথমিক শিক্ষক রূপে শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন:- অনন্ত মেরিট স্কলারশিপে আবেদন করুন এবং পেয়ে যান ভালো পরিমাণ বৃত্তি।

২. আপার প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা:- যে সমস্ত শিক্ষকরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করে থাকেন তাদের আপার প্রাইমারি শিক্ষক বলা হয়। যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং গ্রাজুয়েশনে নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন এবং D.El.Ed. কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন তারা আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষা হয়ে থাকে তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। গ্রাজুয়েশন -এর ক্ষেত্রে অনার্স থাকুক বা পাস কোর্স যেকোনো ক্ষেত্রেই ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে এবং D.El.Ed. কোর্স থাকলে আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে।

৩. নর্মাল সেকশন স্কুল টিচার হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যক যোগ্যতা:- যে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকারা নবম এবং দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দান করে থাকেন তাদের নর্মাল সেকশন স্কুল টিচার বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নবম, দশম শ্রেণীতে শিক্ষকতা করার জন্য একজন চাকরিপ্রার্থীকে গ্রাজুয়েশনে অথবা পোস্ট গ্রাজুয়েশনের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং B.Ed. কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে, তবেই তিনি নবম এবং দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা গ্রাজুয়েশনে ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি কিন্তু পোস্ট গ্রাজুয়েশনে ৫০ শতাংশ নম্বর রয়েছে তারাও শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

৪. হায়ার সেকেন্ডারি স্তরের শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যক যোগ্যতা:- যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দান করে থাকেন তাদের হায়ার সেকেন্ডারি স্তরের শিক্ষক বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে পোস্ট গ্রেজুয়েশনে ন্যূনতম ৫০% নম্বর পেতে হবে এবং বি. এড কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে, তবেই আপনি হায়ার সেকেন্ডারি স্তরের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষা হয়ে থাকে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

উপরোক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রের শিক্ষক হওয়ার জন্যই রাজ্য সরকারের তরফে শিক্ষক নিয়োগের যে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে তাতে চাকরিপ্রার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হতে হবে তবেই একজন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষকতা করার সুযোগ পাবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, উপরোক্ত প্রত্যেকটি শ্রেণীর শিক্ষকতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত ছাত্রছাত্রী এবং বিশেষভাবে সক্ষম চাকরিপ্রার্থীরা নম্বরের ক্ষেত্রে ৫% -এর ছাড় পাবে। অর্থাৎ এই সমস্ত ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকে, স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় কিংবা স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষায় ৪৫% নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এর পাশাপাশি আরও জানিয়ে রাখি যে, নতুন নিয়ম অনুসারে আপার প্রাইমারি এবং প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে বি.এড কোর্সটিও একইভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ কোনো চাকরিপ্রার্থী যদি ডি.এল.এড কোর্সটির পরিবর্তে বি. এড কোর্সটি সম্পন্ন করেন, তাহলেও তিনি প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, নর্মাল সেকশন স্কুল টিচার এই তিনটি ক্ষেত্রের চাকরির পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

Leave a Comment