রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন করলেই মিলবে এককালীন ২৫,০০০ টাকার অনুদান।

সমগ্র ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত মহিলাদের পুরুষের সমতুল্য মনে করা হয় না, এমনকি বহুক্ষেত্রেই মেয়েদের পরিবারের উপর বোঝা মনে করা হয়ে থাকে। আর তাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে নারী উন্নয়নের খাতিরে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। আর নারী উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকর এমনই এক বিশেষ প্রকল্প হল রূপশ্রী প্রকল্প, যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর পরিবারের মেয়েদের বিয়ের খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।

রূপশ্রী প্রকল্প কি?

পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী দরিদ্র এবং দুঃস্থ পরিবারগুলির মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তার জন্যই রাজ্য সরকারের তরফের রূপশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের যুবতীদের বিয়ের জন্য সাহায্যের খাতিরে ২৫ হাজার টাকার অর্থসাহায্য প্রদান করা হয়ে থাকে।

রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা কি কি?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কার্যকরী রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী পাত্রীর বয়স ১৮ বছর কিংবা তার থেকে বেশি এবং পাত্রের বয়স ২১ বছর কিংবা তার থেকে বেশি হতে হবে। এর পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী নাগরিকরাই কেবলমাত্র রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। যে সমস্ত মেয়ের পরিবারের বাৎসরিক আয় ১.৫ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় কম তারাই কেবলমাত্র রূপশ্রী প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। আবেদনকারীদের সুবিধার্থে আরও জানিয়ে রাখি যে, রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে পাত্রীর নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব নয়।

রুপশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া:-

বর্তমানে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী রূপশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনারা বাড়িতে বসেই রূপশ্রী প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই রুপশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbrupashree.gov.in/admin/login -এ যেতে হবে। উপরোক্ত ওয়েবসাইটের হোম পেইজে থাকা Sign up অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।

এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনাকে আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, জেলা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং আপনার পছন্দ অনুসারে user name এবং password লিখে Sign up অপশনে ক্লিক করতে হবে, তাহলেই রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে user name ও password -এর মাধ্যমে Sign in -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। Sign in -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেই আপনার সামনে রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এরপর আপনার নাম, বয়স, ঠিকানা, পিন কোড, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, IFSC কোড, আধার নম্বর অথবা ভোটার নম্বর, ধর্ম, কাস্ট, শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করুন। এরপর ফর্মে উল্লিখিত সমস্ত নথি সঠিকভাবে আপলোড করে ফর্মটি সাবমিট করলেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

আরও পড়ুন:- গ্যাসের ভর্তুকি কারা পেয়ে থাকেন? আপনি গ্যাসের ভর্তুকি কি়ভাবে পাবেন, জেনে নিন।

অন্যদিকে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রেও আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে রূপশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbrupashree.gov.in/admin/Login/ -এ। এরপর হোম পেইজে থাকা Rupashree Online Application Form (Revised) – Download অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে হবে এবং ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। পরবর্তীতে ফর্মে উল্লিখিত সমস্ত প্রকার নথি ফর্মের সঙ্গে অ্যাটাচ করে BDO অফিসে অথবা সাব ডিভিশন অফিসে কিংবা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন কমিশনের অফিসে জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনি উপরোক্ত অফিসগুলি থেকে রূপশ্রী প্রকল্পের ফর্ম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে জমা করলেও রূপশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন।

এছাড়াও আবেদনকারী পাত্রীরা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমে রূপশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে যেভাবেই আবেদন জানানো হোক না কেন রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার বিয়ের ন্যূনতম ৩০ থেকে ৬০ দিন আগে আবেদন জানাতে হবে।

আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি নথি প্রয়োজন হতে চলেছে?

আবেদনকারী পাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয়ের সার্টিফিকেট।
পাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র (ভোটার কার্ড/ প্যান কার্ড / আধার কার্ড/ বার্থ সার্টিফিকেট)
আবেদনকারী পাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাস বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার জেরক্স কপি
পাত্র এবং পাত্রীর সদ্যতোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
পাত্রের বয়সের প্রমাণপত্র (ভোটার কার্ড/ প্যান কার্ড / আধার কার্ড/ বার্থ সার্টিফিকেট)
বিয়ের কার্ড
ম্যারেজ রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট

Leave a Comment