সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী দরিদ্র অসহায়, দুঃস্থ সাধারণ জনগণকে ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য যেমন: চাল, গম, আটা প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই খাদ্যসাথী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। তবে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী কার্যকর হওয়া এই খাদ্যসাথী প্রকল্প এবং রেশন ব্যবস্থাকে ঘিরে দুর্নীতির অন্ত নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্ট অনুসারে, রাজ্যব্যাপী রেশন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যে দুর্নীতি চলছে তা বন্ধ করার জন্য ইতিপূর্বেও রাজ্য সরকারের তরফে বারংবার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এবারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সমগ্র রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য এমন এক পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়েছে তার মাধ্যমে ২ কোটি উপভোক্তার রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ইতিপূর্বে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী ১০ কোটি ৫৬ লক্ষ রেশন উপভোক্তা ছিলেন কিন্তু বর্তমানে রাজ্যবাসী ৮ কোটি ৮১ লক্ষ রেশন উপভোক্তা রয়েছেন। অর্থাৎ রাজ্য সরকারের তরফে গৃহীত নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে ২ কোটি অযোগ্য রেশন উপভোক্তার রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যে মূল প্রশ্নটি রয়ে যায় তা হল, কাদের রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে? আর এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য সরকারের খাদ্য দপ্তরের তরফে সমগ্র রাজ্যের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, যে সমস্ত মৃত ব্যক্তির রেশন কার্ড এখনো পর্যন্ত অ্যাক্টিভ রয়েছে তাদের রেশন কার্ডগুলো বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও সমগ্র রাজ্যব্যাপী এমন বহু মানুষ রয়েছেন যাদের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির নামে দুটি রেশন কার্ড কার্যকর করা হয়েছে, এই সমস্ত ব্যক্তিদের একটি রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, এমনটাই জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে করোনা মহামারীর সময় থেকেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের তরফে সাধারণ জনগণের সুবিধার খাতিরে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই রেশন ব্যবস্থাকে পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারত জুড়ে যে দুর্নীতি আরম্ভ হয়েছে তার কারণে সরকারকে রেশন খাতে বহু অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়। আর তাতেই এই সমস্ত রেশন কার্ড চিহ্নিত করতে উদ্যোগী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। ইতিপূর্বে বারংবার রাজ্য সরকারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল যে মৃত ব্যক্তিদের রেশন কার্ড ডিঅ্যাক্টিভ করা হচ্ছে না, বরং মৃত ব্যক্তির রেশন কার্ডের মাধ্যমে রেশন সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল যে, একই ব্যক্তির একাধিক রেশন কার্ড রয়েছে এবং সেই রেশন কার্ডের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি নিজের বরাদ্দ রেশনের তুলনায় অধিক পরিমাণ রেশন সংগ্রহ করছে, এছাড়াও ভুয়ো কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগ তো রয়েছেই।
আরও পড়ুন:- এবার থেকে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণ হবে একই ট্রেনে, রেল ব্যবস্থায় আমূল বদল আনতে উদ্যোগী ভারতীয় রেল।
আর এই সমস্ত অভিযোগের জেরে সমগ্র রাজ্যের ২ কোটি রেশন গ্রাহকের রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই সমস্ত অযোগ্য ব্যক্তিরা আর কোনোভাবেই রেশন কার্ডের মাধ্যমে রেশন পাবেন না এমনটাই জানানো হয় রাজের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের তরফে। এর পাশাপাশি আরো জানা গিয়েছে যে, রাজ্যব্যাপী ২ কোটি রেশন গ্রাহকের রেশন কার্ড বাতিল হওয়ার কারণে রাজ্য সরকারের প্রায় ২০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে চলেছে। এর ফলে রাজ্য সরকারের কোষাগারে বেশ খানিকটা অর্থ জমা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রেশন ব্যবস্থা থেকে যে অতিরিক্ত টাকা সঞ্চয় করা হচ্ছে তা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের খাতিরে অন্য কোনো খাতে কাজে লাগানো যাবে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক মহলের বিশেষ্য ব্যক্তিত্বরা।