বাসে উঠলেই বমি বমি ভাব? মুক্তি পেতে কি করবেন, জেনে নিন।

সমগ্র ভারত তথা বিশ্বজুড়ে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্রমণে যেতে ভালোবাসে। তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই তো আর ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়, বিশ্বব্যাপী এমন প্রচুর জায়গা রয়েছে যেখানে বাস কিংবা গাড়ির মাধ্যমে যাত্রা করতে হয়। আর এখানেই মূল সমস্যা। বহু মানুষ ভ্রমণে উৎসাহী হলেও তারা বাস কিংবা গাড়ির মাধ্যমে যাত্রা করতে পারেন না। বিশ্বব্যাপী এমন প্রচুর মানুষ রয়েছেন যারা বাসে উঠলেই বমি করে ফেলেন, কারোর কারোর ক্ষেত্রে আবার গা গোলানো, বমি বমি ভাব, অস্থিরতা সহ একাধিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। যদিও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন নির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুসারে এমন বেশ কতগুলি নিয়ম সম্পর্কে জানা গিয়েছে যেগুলির মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বাসে বমি এড়ানোর জন্য যে যে বিষয়গুলির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে তাহলে:-

১. বাসে ওঠার আগে পেট ভরে খাবেন না:-

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে, যাদের বাসে উঠলেই বমি হওয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের বাসে ওঠার আগে কখনোই পেট ভরে খাওয়া উচিত নয়। শুধু তাই নয়, বাসে ওঠার আগে মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। অধিক মশলাযুক্ত খাবার খেলে কিংবা পেট ভর্তি করে খাবার খেলে হজমে সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে বাসে উঠলেই বমি হয়ে যায়। আবার একেবারে খালি পেটেও বাসে ওঠা উচিত নয়, এতে অ্যাসিডিটি হয় যা বমি হওয়ার অন্যতম কারণ। সুতরাং বাসে যাত্রা করবার বেশ কয়েক ঘন্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত অথবা যাত্রা করার পূর্বে হালকা খাবার খাওয়াই উচিত।

২. যাত্রার সময় বাসের সামনের দিকের সিটগুলিতে বসার চেষ্টা করুন:-

যেকোনো ক্ষেত্রে যাত্রা করার সময় বাসের সামনের দিকের সিটে বসার চেষ্টা করুন। পেছনের দিকে সিটে বসলে গাড়িকে অধিক গতিশীল মনে হয়, যার কারণে বমি বমি ভাব, গা গোলানো মত সমস্যাগুলি দেখা যায় এবং বমি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

৩. যাত্রাকালে জানালার ধারের সিটে বসার চেষ্টা করুন:-

বাসে যাত্রার সময় জানালার ধারের সিটে বসার চেষ্টা করুন। জানালা খোলা রাখুন এবং বাইরের হাওয়া ভেতরে আসতে দিন। যতটা সম্ভব বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করুন এবং প্রকৃতি উপভোগ করুন, এতে আপনার চোখ ও মস্তিষ্ক আপনার গতিশীল অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং গা গোলানো, বমি বমি ভাব কমবে। যেহেতু মোশন সিকনেস -এর কারণে বাসে উঠলে অসংখ্য মানুষের বমি হয়ে থাকে তাই অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এই উপায়টি বিশেষ কার্যকরী।

৪. বাসে উঠে বই পড়া এবং ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন:-

অনেকেই বাসে উঠে বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করে আবার অনেকেই ফোন ব্যবহার করতে থাকেন, যা উক্ত ব্যক্তির বমি বমি ভাবকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং বাসে উঠে বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়া অথবা ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন অথবা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে আসুন, এতে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশই কমে যায়।

আরও পড়ুন:- যাত্রীদের সুবিধার্থে রেলওয়ে পরিষেবায় আনা হলো বিশেষ পরিবর্তন। বিশদে জেনে নিন।

৫. বমি থেকে মুক্তি দেবে আদা এবং চুইংগাম:-

যাদের বাসে উঠলেই বমি হওয়ার মত সমস্যা রয়েছে তারা বাসে উঠেই এক টুকরো আদা কিংবা চুইংগাম মুখে দিয়ে চেবাতে পারেন, এতে বমি হওয়ার প্রবণতা যথেষ্ট কমে যায়। এক্ষেত্রে পেপারমিন্টও যথেষ্ট উপকারী। সুতরাং যাদের বাসে উঠলেই বমি হওয়ার সমস্যা রয়েছে তারা যাত্রার সময় আদা কুচি এবং চুইংগাম নিয়ে যাত্রা করতে পারেন এতে বমি থেকে মুক্তি মিলবে।

৬. বমি থেকে মুক্তি পেতে ডাবের জল:-

প্রতিদিন ডাবের জল পান করতে পারলে মানুষের শরীর এবং স্বাস্থ্য উভয়েই ভালো থাকে। তবে মানুষের শরীর, স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি ডাবের জল মোশন সিকনেস -এর কারণে বমি হওয়া থেকেও মুক্তি পেতে সহায়তা করে থাকে। বাসে যাত্রাকালে ডাবের জল খেতে পারলে বমি বমি ভাব, গা গোলানো বাসে উঠলে বমি হওয়ার মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, এক কাপ ডাবের জলে এক চামচ চা এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে সাথে সাথে বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাত্রাকালে উপরোক্ত দ্রব্যগুলি না পাওয়া গেলে শুধুমাত্র ডাবের জল পান করলেও যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

nausea-in-the-bus

৭. বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি দেবে লেবু এবং লেবু পাতা:-

যে সমস্ত ব্যক্তিদের বাসে উঠলেই গা গোলায় এবং খানিক সময় পরে বমি হয়ে যায় তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাসে ওঠার আগে এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করতে পারেন। অন্যদিকে যাত্রাকালে গা গোলাতে থাকলে অথবা বমি বমি ভাব দেখা দিলে এক টুকরো লেবু মুখে দিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও লেবু এবং লেবু পাতার গন্ধে বমি বমি ভাব এবং গা গোলানোর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। কোনোক্ষেত্রে যদি লেবু না পাওয়া যায় তাহলে অন্য কোনো টক জাতীয় ফলেও এই একই ফলাফল মিলবে। সুতরাং লেবুর বদলে অন্য যেকোনো টক জাতীয় ফল খেয়েও এই বমি বমি ভাব গা গোলানোর মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৮. যাত্রার আগে ঘুম ভীষণ জরুরি:-

এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা যেকোনো জায়গায় যাওয়ার আগে ভালোভাবে ঘুমোয় না গোছগাছ এবং প্ল্যানিং নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে হজমে অনিয়ম দেখা যায়। আর হজমে অনিয়ম হলে বাসে উঠে অবধারিত বমি হবে। সুতরাং যেকোনো জায়গায় যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম অসম্ভব জরুরী। তাই যেকোনো জায়গায় যাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান এবং ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করুন, তাহলেই বাসে বমি হওয়া গা গলানো মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এর পাশাপাশি দারুচিনি, লবঙ্গ, মৌরির মতো মশলাগুলিও বমি বমি ভাব দূর করতে যথেষ্ট উপকারী। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে বমি বন্ধ করার যে সমস্ত ওষুধ রয়েছে সেগুলিও সেবন করতে পারেন। তবে এই সমস্ত পরামর্শ মেনে চলার পরেও যদি আপনার বমি বমি ভাব কিংবা গা গোলানো মাথা ঘোরানোর মত সমস্যাগুলি দূর না হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment