সমগ্র ভারতের বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা শেষ করার পর অথবা পড়াশোনা চলাকালীন সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের চাকরির জন্যই চেষ্টা করে থাকেন। তবে করোনা মহামারী চলাকালীন যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণে বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় চাকরির ক্ষেত্রেই যথেষ্ট প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই সরকারি চাকরি করা অধিক লাভজনক নাকি বেসরকারি চাকরি করা অধিক লাভজনক তা নিয়ে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন উঠে এসেছে। ফলত আজকের এই পোস্টে আমরা সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করতে চলেছি।
সরকারি চাকরি ও বেসরকারি চাকরির তুলনা:-
সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরির মধ্যে তুলনা করতে হলে প্রথমেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে হয়। সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া যথেষ্ট দীর্ঘমেয়াদি। রাজ্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্তরের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, মেইনস পরীক্ষা পার করে ইন্টারভিউতে সফল হতে হয়। এক্ষেত্রে আরও বলতে হয় যে, সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলিতে প্রচুর সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে থাকে তাই সমস্ত পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পন্ন করতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন হয়ে থাকে। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা। এক্ষেত্রে ইন্টারভিউ কিংবা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
এরপর আসা যাক সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কাজের চাপ থাকে তার কথায়। স্বভাবতই বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের কাজের চাপ যথেষ্ট বেশি। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কাজের চাপ বেসরকারি চাকরির তুলনায় কম থাকে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমনটা হয় না, এমন বেশ কিছু সরকারি চাকরি রয়েছে যেগুলিতে যথেষ্ট কাজের চাপ থাকে এবং দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সুবিধার বিষয়গুলি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
এরপর আসা যাক ছুটির কথায়। বাঙালি আর ছুটির এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। সরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করলে আপনি নিজের প্রয়োজন অনুসারে ছুটি নিতে পারবেন, এছাড়াও আপনি যে রাজ্যে চাকরি করছেন সেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রকার উৎসব, অনুষ্ঠানে ছুটি পাবেন। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ছুটি পাওয়া অতটাও সহজ নয়। বিশেষত কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই চেন্নাই -এর মতো মেট্রো সিটিগুলির বেসরকারি কোম্পানিগুলির অধীনে কর্মরত কর্মীদের ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক আগে আবেদন জানাতে হয়, এমনকি বহু ক্ষেত্রেই নানাবিধ আঞ্চলিক আচার, অনুষ্ঠানেও ছুটি পাওয়া যায় না।
এরপর বলতে হয় অবসরকালীন পেনশনের কথা। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীরা অবসরের পর পেনশনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। মূলত সরকারি ক্ষেত্রের কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্যই এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীরা তাদের অবসর গ্রহণের পর কোনরকম পেনশনের সুবিধা পান না।
আরও পড়ুন:- নবান্ন স্কলারশিপের আবেদনের প্রক্রিয়ায় আনা হলো বিশেষ পরিবর্তন, নতুন আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।
সরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের চাকরিতে স্থায়িত্ব রয়েছে অর্থাৎ একবার চাকরি পেয়ে গেলে আর চাকরি হারানোর ভয় নেই। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের পারফরম্যান্স অনুসারে পদোন্নতি এবং বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কোনো কর্মী যদি সঠিকভাবে কাজ না করেন অথবা অফিসের সমস্ত নিয়ম মেনে না চলেন তবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা সম্ভব। অন্যদিকে কোন কারণে যদি কোন কোম্পানি উঠে যায় তবে পরবর্তীতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং এক কথায় বলা চলে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করলে সরকারি চাকরির মতো নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব নয়।
সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের কাজের বাঁধাধরা সময় রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কোন কর্মীকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে কোন রকম সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছুটির সময় পার হয়ে গেলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মচারীদের কাজ করতে হয়। যদিও এখেতে ওয়ার্ক ফর্ম হোম -এর সুবিধা পাওয়া যায়, যা সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য কোনোভাবেই উপলব্ধ নয়।
সরকারি ক্ষেত্রে চাকুরীরত কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি অফিসগুলিতে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও এখনো পর্যন্ত দেশের সমস্ত ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ টেকনোলজি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ডিজিটালাইজ টেকনোলজির মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা পাওয়া যায়।
বলাই বাহুল্য বেসরকারি চাকরির তুলনায় সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীরা অধিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ট মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে হয় এবং ধৈর্য সহকারে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে সমগ্র ভারতজুড়ে এমন প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা পড়াশোনা শেষ করার পরই চাকরি পেতে চান, তাদের জন্য বেসরকারি চাকরি একেবারে পারফেক্ট। সরকারি চাকরির দীর্ঘমেয়াদি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে বর্তমানে বহু মানুষ সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকেছেন। এর পাশাপাশি আরও বলতে হয় যে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে হারে কম্পিটিশন বাড়ছে তাতে আগামী দিনে আরো প্রচুর সংখ্যক নাগরিক বেসরকারি ক্ষেত্রে যুক্ত হবেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের তরফে।