শাক খেলে কি উপকার পাবেন, কোন কোন শাকে কি কি ভিটামিন রয়েছে, জেনে নিন।

বাঙালির পাতে রোজদিন মাছ, মাংস থাকুক বা না থাকুক অবশ্যই থাকবে। তবে শুধুমাত্র বাঙালি নয়, সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সাধারণ জনগণের খাদ্য তালিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যবস্তু হল শাক। সিজন চেঞ্জের সময় সুস্থ থাকতে শাকের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও শাক পেটের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, এমনকি শাকে থাকা বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে থাকে। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলে বিভিন্ন প্রকার শাকে কোন কোন ধরনের ভিটামিন থাকে এবং কোন শাক খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা সম্পর্কে জানা গিয়েছে। চলুন তবে কোন শাক খেলে কি উপকার পাওয়া যায় তা সংক্রান্ত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-

১. কলমি শাক :-

গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শাক হল কলমি শাক। এই শাক পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলমি শাকে থাকা বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে, যা হৃদরোগের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ কলমি শাক খেলে হৃদরোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় কলমি শাকে থাকা ১৩ প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়তা করে। অন্যদিকে কলমি শাকে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।

২. লাল শাক:-

যে সমস্ত ব্যক্তিদের অ্যানিমিয়া রয়েছে অথবা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যথেষ্ট কম তাদের জন্য লাল শাক অত্যন্ত উপকারী। লাল শাকে এমন কিছু বিশেষ উপাদান বিদ্যমান যা দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যাকে বৃদ্ধি করে, ফলত লাল শাক খেলে অ্যানিমিয়া কিংবা রক্তাল্পতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাল শাক খেলে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ডাক্তারদের মতানুসারে, লাল শাকে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম -এর মত উপাদানগুলি ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও লাল শাক থাকা ভিটামিন সি দৃষ্টিশক্তির সার্বিক উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।

green-herbages

৩. পুঁই শাক:-

পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও পুঁইশাকে থাকা ক্যালসিয়াম, খনিজ লোহা, ম্যাগনেশিয়ম ও জিংক -এর মত উপাদানগুলি মানব দেহে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত মাথাব্যথার সমস্যায় ভুক্তভোগী তারা নিয়মিত পুঁইশাক খেলে মাথাব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে যে সমস্ত ব্যক্তিদের হার্টের অসুখ রয়েছে তারা এই শাক খাবেন না।

আরও পড়ুন:- সরকারি চাকরি নাকি বেসরকারি চাকরি কোনটি বেশি সুবিধাজনক, জেনে নিন।

৪. পাট শাক:-

পাট শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মানব দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে পাটশাকে থাকা ভিটামিন সি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও পাটশাকে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পেটের রোগ সারাতে সর্দি কাশি উপশম পাট পাতা যথেষ্ট উপকারী। যে সমস্ত ব্যক্তিদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পাট শাক খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

৫. মুলো শাক:-

মুলো শাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া মুলো শাকে এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে শুধুমাত্র ক্যান্সার নয় মূলার শাক অ্যালার্জি এবং হৃদরোগ দূরে রাখার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকে। ডাক্তারদের মতানুসারে, মুলো শাক পেটের সমস্যা দূরে রাখতে সহায়তা করে থাকে, এমনকি তেল অথবা ঘিয়ে ভেজে মুলো শাক খেলে তা বাতের সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে।

৬. হিঞ্চে শাক:-

বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে জানা গিয়েছে যে, হিঞ্চে শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এই শাক মানব দেহকে ঠান্ডা রাখতে এবং রক্ত পরিস্রুত করণের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকে। এই শাক অ্যানিমিয়া কিংবা রক্তাল্পতা দূরীকরণে সহায়তা করে, যার কারণে যে সমস্ত ব্যক্তিদের অ্যানিমিয়া কিংবা রক্তাল্পতা রয়েছে তাদের হিঞ্চে শাক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

Leave a Comment